পিঠেপুলি vs বিরিয়ানি
বাঙালির শীতকাল মানেই এদিক-ওদিক চড়ুইভাতি, শীতের হালকা রোদে আচার শুকোতে দেওয়া, ডাল বেটে বড়ি তৈরি করা, খেতে বসে ধনেপাতার চাটনি, কিংবা সন্ধ্যেবেলায় ধনে পাতার বড়া সঙ্গে মুড়ি মাখা, সকালবেলা গরমাগরম কফিতে চুমুক আর শীতকাল বলতে বোঝায় পিঠে, পুলি, পাটিসাপটা। কখনো সিদ্ধ পিঠে, কখনো আবার দুধ পুলি পাটিসাপটা, কখনো গোকুল পিঠে, কখনো ভাপা পিঠে।
মা, জেঠিমা, কাকিমারা একেবারে কোমরে আঁচল গুঁজে রান্না করতে শুরু করে দিতেন পিঠের রকমারি। শীতকালের রাতে কম্বল চাপা দিয়ে বসে পিঠে খাওয়ার স্বাদই আলাদা। এর মাঝেই মুঘল খানাপিনা বর্তমান প্রজন্মকে বেশ আকৃষ্ট করে। মোগলাই, বিরিয়ানি এইসব মুখরোচক খাবারে নতুন প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে। আগে বাইরে বেরোলেই এই ধরনের খাবার পাওয়া যেত তবে এখন প্রত্যেকের হেঁসেলেই বিরিয়ানি প্রবেশ করেছে সশরীরে। তবে নতুন প্রজন্মকে সেই স্বাদ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত? পিঠে, পাটিসাপটার জায়গা কি কোন ভাবে দখল করে নিচ্ছে বিরিয়ানি? নতুন প্রজন্মকে ভুলে যাচ্ছে পিঠে পুলি, পাটিসাপটাকে? এরকম নানা প্রশ্ন মনের মধ্যে ভিড় করতে থাকে।
নতুন প্রজন্মকে পিঠে, পুলি, পাটিসাপটা খেতে যেতে হয় দোকানে কিংবা কোন মেলায়। কারণ মা, জেঠিমা প্রচন্ড ব্যস্ত চাকরি করতে। চাকরি করে এসে তারা একমাত্র ভালো বানাতে পারেন চটজলদি খাবার । ছোটবেলা থেকে বাড়ির ছোট ছেলেটি চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি খেতে অভ্যস্ত। রান্না করাও সহজ একপাটি ঝামেলাও চুকে যায়। এদিকে পিঠে, পাটি সাপটা করতে কম ঝক্যি? কে আর অতো ঝামেলা সামলায়? এইভাবে কি কোথাও বর্তমান প্রজন্মের শিশু মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পিঠে পুলি পাটিসাপটা? কিছুটা হলেও এই আশঙ্কা অনেকটাই সত্যি। ঠাকুমা, দিদিমাদের দৌলতে খানিকটা হলেও সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে।
তবে কোথাও নতুনের সঙ্গে পুরনোদের দ্বন্দ্ব নেই। নতুন পুরনো সব কিছু নিয়েই চলতে হবে। অর্থাৎ শুরুটা যদি চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি হয় তাহলে শীতে অন্তত বাড়িতে দু-তিনবার পিঠে পুলি, পাটিসাপটা হতেই পারে। পাটিসাপটাতে থাকতে পারে নতুনত্বের ছোঁয়া অর্থাৎ নারকেলের পুর এর বদলে ব্যবহার করতে পারেন চকলেট, কিংবা ঘন দুধের পরিবর্তে ব্যবহার করতেই পারেন খুব সহজে দোকানে কিনতে পাওয়া কন্ডেন্স মিল্ক। নতুনত্বকে সামান্য মিশিয়ে সাবেকিয়ানাকে বজায় রাখার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মেরই।