আজকের গল্প: বর বউ খেলা
বাইরে থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে মিত্তিরদের পুরনো ভাঙ্গা বাড়ির ভিতর। ধুলো ময়লায় ভর্তি জং-ধরা পুরনো আমলের একটা পালঙ্কে সুতনু শুয়ে রয়েছে। বন্ধ দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে এক পশলা বৃষ্টি যার ছাপ এখনো সুস্পষ্ট। প্রেমিকার বিয়েতে আমন্ত্রিত হওয়ার শোক এ জন্মে কাটবার নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে বর সেইসঙ্গে শুরু হয়ে যাবে বিয়ের অনুষ্ঠান।
ছেলেবেলা থেকেই সুতনু আর পিয়াসা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বেড়ে উঠেছে। পাড়াতুতো ভাইবোনের সম্পর্ক হলেও বাকি বন্ধুরা বর বউ খেলার সময় তাদেরকেই জুটি হিসেবে রাখতো। প্রতিদিনের একই খেলায় অভ্যস্ত দুটি শিশুমন কখন যে একে অপরের এত কাছে চলে এলো সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনি।
কম বয়সে তাদের এই ঘনিষ্ঠ মেলামেশা নিয়ে কারোর কোনো অভিযোগ ছিল না বললেই চলে। যৌবনে পা দেওয়ার পরও উভয়ের মধ্যে একই রকমের অন্তরঙ্গতা দেখে গ্রামের মানুষের টনক নড়ে উঠলো। বেকার সুতনুর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তড়িঘড়ি পিয়াসার বাবা অবস্থাসম্পন্ন ঘরে তার বিয়ে ঠিক করে এলো।
বিয়ের লগ্ন শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে কনের সাজ পরিহিত একটি মিষ্টি মেয়ে ধীর পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। তার গন্তব্য মিত্তিরদের ভাঙ্গা বাড়ি। এটিই একমাত্র নির্জন জায়গা যেটি এই যুগলের প্রেম, ভালোবাসা, অনুরাগ, অভিমান সবকিছুর সাক্ষী।
ঘরে ঢুকেই সুতনুর নিথর দেহটা দেখতে পেল পিয়াসা। এতটুকু অবাক হলো না। কাছে গিয়ে প্রেমিকের চোখের কোনে লেগে থাকা অশ্রুবিন্দুর দাগটুকু সযত্নে মুছে দিল। এদিকে বিয়ের কনে উধাও হওয়াতে গ্রামের চারিদিকে খোঁজ খোঁজ রব শুরু হয়ে গিয়েছে।
পরদিন সকালে মিত্তিরদের ভাঙ্গা বাড়ি থেকে উদ্ধার এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনীর দুটি বিপরীত লিঙ্গের শরীর। সম্ভবত ভালোবাসার কারণেই মনে মনে সেই ছোট্টবেলার বরের সঙ্গে সহমরণে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত। মৃত্যুর পর আত্মার বিয়ে সম্ভব হলে এতক্ষনে তারা হয়তো স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সুখের সংসার শুরু করে দিয়েছে। [সমাপ্ত]
(গল্প: কৌশিক পোল্ল্যে
পোস্টার ডিজাইন: কৌশিক ব্যানার্জি
আমাদের এই প্রয়াস কেমন লাগছে জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না। গল্প ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকবেন। আমাদের গল্পগুলি শুধুমাত্র বিনোদনের নিমিত্তে রচিত। কোনোরকম নেতিবাচক চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আশা রাখবো সকলে মুক্তমনে গল্পগুলি গ্রহণ করবেন।)