ছেলের সঙ্গে রান্নার কাজে ৭৪-এর বৃদ্ধ, রকমারি খাবারের সুন্দর ঠিকানা চুঁচুড়ার গাল্লি ক্যাফে
মনের ইচ্ছা থাকলে বয়সটা যে কিছু ব্যাপারই নয় তা বুঝিয়ে দিলেন চুঁচুড়াবাসী ৭৪ বছরের এক বৃদ্ধ। যদিও তার কাজকর্মের ধরন দেখে তাকে বৃদ্ধ বলাটা কতটা ঠিক হবে সেটাই এক প্রশ্নের ব্যাপার। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এই বৃদ্ধ মানুষটি সারা জীবন ধরে নানা হোটেলে এবং নিজের চাকরি করলেও এই বৃদ্ধ বয়সেও ছেলের সঙ্গে যোগ দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন নিজস্ব ক্যাফে।
নিজের হাতে তৈরি করছেন ফিশ ফ্রাই, ফিশ ফিঙ্গার। কর্মচারীরা থাকলেও তাদের পুরো তদারকির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এই মুখার্জীবাবু। চুঁচুড়ার বড়বাজারে দত্ত লজের কাছে গেলেই আপনার চোখে পড়বে এই ছোট্ট ক্যাফে। ছেলে অয়ন মুখার্জীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি প্রতিদিন এই ক্যাফের তদারকি করেন।
ক্যাফে নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল খানিকটা লকডাউনে। লকডাউন এ তিন মাস তখন প্রত্যেকে বাড়িতে বসে তখন অয়ন বাবুর মাথায় একটু বুদ্ধি খেলছিল তিনি ভাবছিলেন কি করে রোজগারকে আরো বাড়ানো যায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ তার একটি গ্যারেজ ফাঁকা পড়েছিল। এক বন্ধুর পরামর্শে এই ফাঁকা গ্যারেজকে তিনি বানিয়ে ফেললেন সে ক্যাফের রান্নাঘর। তবে গলির মধ্যে ক্যাফে করলে চলবে কিনা এই নিয়ে অয়ন বাবুর একটু সন্দেহ ছিল। গলির মধ্যে হওয়া ক্যাফে থেকেই এই কাফের নাম হয়ে গেল ‘গাল্লি ক্যাফে’।
এই ক্যাফের রান্নাঘরের উল্টো দিকেই রয়েছে তাদের ছোট্ট ক্যাফে। আহামরি কিছু না হলেও বিকালের দিকে পরিবারের প্রিয়জনকে নিয়ে বসে খেয়ে আসতেই পারেন তার এই ছোট্ট ক্যাফেতে। অয়ন বাবুর পিতা অর্থাৎ এই ক্যাফের যিনি বড়বাবু তিনি প্রায় ১৯৭৭ সালে এটি ক্যাটারিং এর বিজনেস শুরু করেছিলেন। তাই রান্নাবান্না সম্পর্কে জ্ঞান তার বহুদিনের। এই ক্যাফের আরেকটি বিশেষত্ব হল দুই কিলোমিটারের মধ্যে আপনাকে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসবেন এনারাই।
আসল ভেটকি মাছের ফিস ফ্রাই মাত্র ৬০ টাকা, এছাড়াও আসল ভেটকি মাছের চার পিস ফিশ ফিঙ্গার এর দাম মাত্র ১৩০ টাকা, তা ছাড়াও রয়েছে ডিমের ডেভিল যাতে রয়েছে মাংসের পুর। এছাড়াও রয়েছে মাটন কিমা দিয়ে ডাবল ডিমের মোগলাই। সবমিলিয়ে একেবারে জমজমাট খাওয়া-দাওয়া। খাওয়া-দাওয়া হবে আর বিকালবেলা একটু চা কফি হবে না তা কখনো হয়! তবে চা কফি খেতে আপনাকে কখনোই ক্যাফের বাইরে যেতে হবে না এখানেই রয়েছে দারুণ ব্যবস্থা গ্রিন টি থেকে শুরু করে কেশরী চা-কফি সমস্তকিছুই এনারা নিজে হাতেই তৈরি করে থাকেন।
মুখার্জীবাবু এবং তার ছেলে তো রয়েছেনই রয়েছে আরো দুই – একজন কর্মচারী। ৫০ টাকার মাছের চপ এর মধ্যে এনারা একেবারে আসল কাতলা মাছের ব্যবহার করেন। খাবার নিয়ে কোনরকমে আপস করতে এনারা রাজি নন। তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে এইবার উইকেন্ডে ঘুরে আসতে পারেন চুঁচুড়ার এই ছোট্ট ক্যাফেতে। স্বাদের দিক থেকে বড় বড় রেস্তোরাঁকে হার মানাতে পারে এই মুখার্জীবাবুর ‘গাল্লি ক্যাফে’।