মা-মেয়ের সম্পর্কের রসায়ন টা ঠিক কী? আচ্ছা সমলিঙ্গে কখনো বন্ধুত্ব হয়? বিজ্ঞান বলে পুরুষ নারীকে আকর্ষণ করবে এবং নারী পুরুষকে। হয়তো জন্যেই বাবার সঙ্গে মেয়েদের একটা আলাদা বন্ডিং তৈরি হয় এবং মায়েদের সঙ্গে তার ছেলের। খেয়াল করলে দেখা যাবে বেশিরভাগ পুরুষরা বলেন আমার মেয়ে সন্তান চাই আবার মহিলারা বলেন ছেলে সন্তান চাই। মুখে অনেকেই নারীবাদীতে সোচ্চার হলেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক আলাদা অদৃশ্য টান থাকে। তাহলে কি মেয়েতে মেয়েতে বন্ধুত্ব, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা হয়না? হ্যাঁ হয়। এই পৃথিবী একটা ব্যতিক্রমী গ্রহ। সকলের থেকে আলাদা বলেই আমি আপনি আছি। সুতরাং ব্যতিক্রম থাকবেই। আর যখন এই ব্যতিক্রম ক্লিক করে তখন দুর্দান্ত কিছু হতে পারে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল আজ ‘১৯ শে এপ্রিল’।
এই দিনটা এলেই একজনের কথা ভীষণ মনে আসে, তিনি হলেন বিখ্যাত নিখুঁত ও দক্ষ পরিচালক প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ। সত্যজিৎ রায় যেমন জুহুরী , ঋতুপর্ণ ঘোষও হলেন জুহুরী। তিনি জানেন কতটা ন্যাচারাল ভাবে একজন শিল্পীকে পর্দার সামনে আনা যায়। তার সিনেমায় মেক আপ, অহেতুক সাজ সজ্জার কোনো বাহার নেই। শুধু আছে প্রয়োজনীয় সংলাপ, অফুরন্ত অভিব্যক্তি, পরিমিত শব্দ, আর দুর্দান্ত গল্প।
ঋতুপর্ণের ১৯ শে এপ্রিল আজও বলে দেয় মা ও মেয়ের অভিমানের কথা, ছোটবেলায় মাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা, বাবাকে হারিয়ে ফেলা একটা শিশুকে কতটা অসহায় করে দিতে পারে তারই গল্প বলেছেন ঋতুপর্ণ।
এই ছবিতে, বৃষ্টির রাতে পোলাও রান্না হোক বা মেয়ে মিঠুর সুইসাইড নোট দেখা, আরশোলা দেখে ভয় পাওয়া, মা মেয়ের অভিমান, ভালোবাসা সব খুবই ন্যাচারাল। বৃষ্টির রাতে যখন পোলাও রান্না হচ্ছে তখন বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ স্পষ্ট। ভাড়ার ঘরে আমূল স্প্রের কৌটোর মধ্যে তেজপাতা, পারফিউমের বোতল। উফ্ কি অসাধারণ নিখুঁত কাজ। গল্পে স্পষ্ট মায়ের উপর মেয়ের অভিমান, আবার মায়ের হাঁটুতে চোট লাগার চিন্তাও সেই মেয়েরই আছে – সব মিলিয়ে মা ও কন্যার অসাধারণ কেমিস্ট্রি তুলে ধরেছেন ঋতুপর্ণ। নাহ এখানেই শেষ নয়, মা ডান্সার বলে সুদীপের সঙ্গে ৫ বছরের সম্পর্ক নষ্ঠ হয়ে যাওয়া, এবং সেই সুদিপকে ফোনে বোঝানো যেন চোখের জল এনে দেয়। ঋতুপর্ণ এই ছবিতে মিঠু ও সুদীপের চুম্বন দৃশ্যকেও সুন্দর ভাবে দেখিয়েছেন। মিঠুর ব্যাগ গোছানো আর প্রেমিকের উপর অভিমানের সুর এর গাঢ় চুম্বন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার সিনেমা কতটা বাস্তবিক।
গল্পে দেবশ্রী হয়েছেন অপর্ণার মেয়ে। একজন শিল্পীর হালকা মেক আপে গল্প জুড়ে ছিলেন আর অন্যজন বিনা মেক আপে পুরো গল্প জুড়ে রাজ করে গেলেন। একথা সত্যি যে দেবশ্রী এবং অপর্ণা সেন দুজনেই চমৎকার শিল্পী, তেমনই ঋতুপর্ণ ছিলেন উত্তম কারিগর। উল্লেখ্য, এই সিনেমা ১৯৯৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় এবং দেবশ্রী পান সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।