Hoop PlusTollywood

Rupankar-Koneenica: ‘কেকে ছিলেন, আছেন, থাকবেন’ রূপঙ্করকে যোগ্য জবাব দিলেন কণীনিকা

কেকে (KK) চলে গিয়েছেন হঠাৎই। ফেলে রেখে গিয়েছেন না ভোলা অমূল্য ‘পল’। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ও রূপঙ্কর (Rupankar Bagchi)-কে নিয়ে চলছে তরজা। সেলিব্রিটি থেকে আম জনতা সকলেই রূপঙ্করের নিন্দা করেছেন। ঘটনাচক্রে কেকে-র মর্মান্তিক মৃত্যুর দিনই নজরুল মঞ্চে তাঁর অনুষ্ঠান চলাকালীন রূপঙ্কর একটি ফেসবুক লাইভ করে বলেন, “কেকে-কে নিয়ে এত মাতামাতির কিছুই নেই। তিনি, ইমন (Iman Chakraborty) বা অপর বাঙালি শিল্পীরা কেকে-র তুলনায় অনেক বেশি ভালো গান করেন। কেকে কে?” এরপর থেকেই ধূমায়িত হচ্ছিল অসন্তোষ যার পরিণতি দেখা যায় কেকে-র মৃত্যুসংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর। রূপঙ্করের লাইভের নিন্দা করেন সবাই। ওঠে তাঁকে বয়কটের ডাক। এবার কণীনিকা ব্যানার্জী (Koneenica Banerjee) উত্তর দিলেন কেকে কে!

 

View this post on Instagram

 

A post shared by 4700BC🍿 (@4700bc_)

এদিন হঠাৎ ‘আয় তবে সহচরী’-র মেকআপ রুম থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন কণীনিকা। তিনি তুলে ধরেন নস্টালজিক নব্বইয়ের দশকের কথা যখন মুম্বইয়ের বুকে রিলিজ করেছিল ‘পল’, অপরদিকে বাংলার বুকে রাজত্ব নচিকেতা (Nachiketa), কবীর সুমন (Kabir Suman)-দের। কণীনিকা সেই সময় কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগতা। কেকে-র গাওয়া ‘পল’ শুনেই বড় হয়ে উঠেছেন কণীনিকা। তিনি মনে করেন, নব্বইয়ের দশকের টিনএজাররা প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত ছিলেন ‘কেকে’ নামটির সাথে। কণীনিকার মতে, শিল্পীর জাত, ধর্ম, বর্ণ, জন্মভূমি ম্যাটার করে না। লড়াই নিজের মতো করে প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে।

কারণ বিনোদন জগতে কাগজে তৈরি সার্টিফিকেট দেখিয়ে কাজ পাওয়া যায় না। নিজেকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রমাণ করতে হয়। কেকে ও রূপঙ্কর দুজনের জীবনেই রয়েছে লড়াই। কণীনিকাও একসময় ভেবেছিলেন, অভিনয় জগত ছেড়ে চাকরি করবেন। কিন্তু ভবিতব্য তা হতে দেয়নি। ফলে ‘কেকে কে?’ এই কথাটি শুনতে রাজি নন কণীনিকা। বাঙালি হলেও আজীবন অবাঙালি গান সকলেই শুনেছেন। লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar), মহম্মদ রফি (Mohammed Rafi)-র গান তো আইকনিক। তার সাথে মন কেড়েছে গুলজার (Gulzar)-এর লেখা। শিল্পী তাঁর শিল্পের মাধ্যমেই স্থান করে নেন মানুষের মনে। ফলে কণীনিকার মনে হয়, কারও অধিকার নেই, অপর শিল্পীর পরিচয় ও তাঁর গান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার। কণীনিকার কথায় উঠে এল বিনোদন জগতে অভিনেত্রীদের আত্মহত্যার ঘটনাও। তিনি জানালেন, ইন্দ্রাণী হালদার (Indrani Halder) খুব সুন্দর একটি অনুষ্ঠান করছেন যাতে তিনিও একটি ভিডিও নোট পাঠিয়েছেন।

কণীনিকার মতে, সমাজ তথা দর্শকদের প্রতি শিল্পীদের একটি দায়িত্ব থাকে। কারণ তাঁরা মানুষের কাছে স্বপ্নের জগতের মানুষ। ফলে একজন শিল্পীর উচিত একটু ভেবে-চিন্তে কথা বলা। কিন্তু একজন শিল্পীর শোভা পায় না অপর শিল্পীকে অপমান করা। কণীনিকা জানালেন, তাঁর সমসাময়িক বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা তার তুলনায় কেরিয়ারে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। কিন্তু কণীনিকার কখনও মনে হয়নি “এরা কারা?” তিনি নিজের কেরিয়ার নিয়ে যথেষ্ট ভালো আছেন।

কণীনিকার মনে হয়, রূপঙ্করকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই কেকে কে! কেকে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। কারণ শিল্পীর মৃত্যু হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন কণীনিকা। তিনি মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্ক গঠনের স্থান, অপমানের নয়।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by E24 Bollywood (@e24official)

পরিশেষে, একটি কথা বলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ অবধি মিডিয়ার কাছে কাজ করতে শত কষ্ট হলেও মুখ খোলেননি শিল্পীরা। তাঁরা অম্লান হয়ে নিজেদের কাজ করে গেছেন। বিনোদনের মাধ্যমে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত রেখেছেন দর্শকদের। কিন্তু এবার সময় এসেছে মিডিয়ার মুখ খোলার। যাঁরা মানুষকে প্রতিনিয়ত বিনোদন যোগান, তাঁদের জীবন এত কষ্টকর কেন। কেকে হয়তো আজও আমাদের মধ্যে থাকতেন, যদি সেদিন নজরুল মঞ্চের আড়াই হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে সাত হাজার না হত যা ছিল অত্যন্ত বেআইনি। সেদিন দরদর করে ঘামছিলেন কেকে। বন্ধ ছিল নজরুল মঞ্চের এয়ার কন্ডিশনার। তবুও শেষ অবধি শো করে গিয়েছেন কেকে। লুটিয়ে পড়েছেন গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁর নিজের ঘরে পৌঁছে। কণীনিকার মুখেও শোনা গেল, শুটিং ফ্লোরে অধিকাংশ সময় এয়ার কন্ডিশনার থাকে না। এমনকি গরমেও চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে বেনারসি পরে শটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় সারাদিন। অর্থাৎ অধিকাংশ মেকআপ রুমেও থাকে না এয়ার কন্ডিশনার।

অথচ বারবার মিডিয়ার মাধ্যমে ও গুগল সার্চ করে প্রত্যেকেই জানছেন, ক্রমশ গরম বাড়ছে, বাড়ছে হিউমিডিটি। শিল্পীর কাজ শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু সেই শিল্প কেন তাঁদের কাছে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে? কেকে-কে হারিয়ে ফেলল পৃথিবী, হারিয়ে ফেললেন তাঁর পরিবার ও অনুরাগীরা। এইরকম অব্যবস্থা চলতে থাকলে এই ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যুর তালিকায় উঠে আসবে আরও অনেক শিল্পীর নাম। গান স্যালুটের থেকেও বেশি এই মুহূর্তে প্রয়োজন শিল্পীদের একটু আরামদায়ক ভাবে কাজের ব্যবস্থা করার। অনুরাগীদের উচিত এই বিষয়ে সরব হওয়া। কারণ কখনও কখনও চিরাচরিত কাঠামোর পরিবর্তন হওয়া উচিত।

Related Articles