বাবার অনুপ্রেরণা নিয়ে লকডাউনে চকলেট ও কেকের ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত ডানকুনির অমৃতা
ছোটবেলাতেই বাবা-মা, কাকু কাকিমা এবং আরো কয়েকজনের মধ্যে বেড়ে ওঠা অমৃতা ছোট বোনের সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে কি করে যে বড় হয়ে গেল অমৃতা তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। করোনা ভাইরাস অনেকের জীবনেই অনেক খারাপ প্রভাব ফেলেছে, কেড়ে নিয়েছে অনেক আত্মীয় পরিজনের প্রাণ কিন্তু অনেককে আবার স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। পড়াশোনা শিখে শিক্ষিত হয়ে বাড়িতে বসে থাকার জ্বালা সহ্য করেছে ছোট্ট অমৃতা। গ্রাজুয়েশনের পাশাপাশি কম্পিউটারের কোর্স করে ইচ্ছা ছিল চাকরি করার। ঠিক সেই সময় হঠাৎই লকডাউন এসে যায়। চাকরি করার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। স্বপ্ন ভেঙে গেলেও মন ভেঙে যায়নি।
নতুন কিছু করার জন্য মন বরং আরো শক্ত পোক্ত হয়ে উঠলো সে। লকডাউনে বাড়ি থেকে বেরোনো নেই হাতে রয়েছে তাই অঢেল সময়। হাতে এন্ড্রয়েড ফোন এবং ফেসবুকে একটু ঘোরাঘুরি করতেই চোখে পড়লো একটি অসাধারণ ছোট ব্যবসার কথা। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছোটবেলা থেকেই অমৃতা খেতে খুব ভালোবাসে আর এই ভালবাসাকে কাজে লাগিয়েই শুরু করলো নিজের ব্যবসা। কাছের আত্মীয় তাকে একদিন হাতে তৈরি করা চকলেট খাইয়ে ছিল। এই চকলেট খেয়ে বেশ ভালো লেগেছিল অমৃতার। বড় হয়ে বাবার পাশে মেয়ে হয়ে ছেলের মতন দাঁড়াবে এই ভাবনা থেকেই পথ চলা শুরু। সারাবছর ধরে জমানো টাকা থেকে ২০০০ টাকা নিয়ে শুরু করলেন তার প্রথম ব্যবসা। প্রথমে শুরু করলেন চকলেট বানাতে। নিত্যনতুন চকলেট বানিয়ে মানুষকে প্রথমে উপহার দিয়েছিলেন। তারপরে সেই চকলেট খেয়ে প্রত্যেকেই প্রশংসা করল। চকলেটের দাম শুরু মাত্র ৪ টাকা । কাস্টমাইজড চকলেট তৈরি করতেই বেশি পছন্দ করেন অমৃতা, অর্থাৎ কাস্টমার যেরকম বলবে সেরকম বানিয়ে দেবে।
ডানকুনি চন্ডীতলা গরলগাছানিবাসী অনিল দাস এবং সুলেখা দাসের বাড়িতে বেড়ে উঠছিল দুই বোন অমৃতা এবং অর্চিতা। ছোটবেলা থেকেই অনিল বাবু তার মেয়েকে শিখিয়েছেন কিভাবে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়। বাবার এই পথ চলাকে আদর্শ করেই অমৃতার পথ চলা শুরু। অমৃতাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সাহায্য করেছেন তার বাবা-মা। ট্রেন বাস বন্ধ হওয়ার দরুন এখন অনলাইনের মেটেরিয়াল কিনে বানাতে হচ্ছে অমৃতাকে। কিন্তু লকডাউন এর আগে কলকাতা থেকে জিনিসপত্র কিনে এনে জিনিস তৈরি করতে শুরু করেছিল সে। বাবার মুদিখানার দোকান আর মায়ের কোমরের ব্যথার জন্য বাবা-মা তাকে জিনিসপত্র আনার জন্য সাহায্য করতে পারেনি। এ বিষয়ে তিনি এক বন্ধুর সাহায্য পেয়েছেন। প্রতি পদক্ষেপে অমৃতাকে সামনে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখিয়েছে এই বন্ধু।
তবে অমৃতা শুধু চকলেট আর কেক এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তৈরি করে ফেলেন ফিরনি, অসাধারণ এক ডেজার্ট আইটেম। যা অনেকেই খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। তবে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা আছে কুকিজ এবং পিজ্জা বানানোর। এই ছোট ব্যবসার নাম দিয়েছেন Amrita’s choco Wings. নামটা বুঝি সত্যিই সার্থক। উইংস অর্থাৎ ডানা এখানে অমৃতার ডানা মেলে ওপরে উঠে যাওয়ার স্বপ্ন প্রকাশ পাচ্ছে। চকলেটের মধ্যে রয়েছে নানান ভ্যারাইটি ডার্ক চকলেট, মিল্ক চকলেট, অরেঞ্জ চকলেট, পেস্তা চকলেট আরো কত কি। এছাড়া ক্রিম কেকের মধ্যে একটি খেয়ে অমৃতার কাস্টমাররা ভীষণ পছন্দ করেছেন সেটি হল ক্রিকেট গ্রাউন্ড কেক। এছাড়াও আপনার ইচ্ছা মতন কাস্টমাইজড কেক তৈরি করতে সদা প্রস্তুত ছোট্ট অমৃতা। অমৃতার তৈরি কেকের মধ্যে রয়েছে – হানিকোম্ব কেক, ম্যাংগো কেক, অ্যানিভার্সারি স্পেশাল কেক, সিটিং গার্ল কেক, আরো কত কি। কেক শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছে দিল্লি রোডের বাসিন্দা পূজাদির কাছে।
অমৃতার তৈরি চকলেট পৌঁছে যায় পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে, কলকাতা থেকে শুরু করে দুর্গাপুর, আসানসোল, নদীয়া বিভিন্ন প্রান্তে ডেলিভারি করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কেক ডেলিভারি করার ব্যবস্থা এখনও করে উঠতে পারেনি অমৃতা। এজন্য আপনাদের অমৃতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিতে হবে। ভবিষ্যতে এই ব্যবসাটাকে আরো অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে অমৃতা। যেহেতু অমৃতার কোন দাদা নেই তারা দুই বোন মিলে মা-বাবার পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকতে চায়। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে দেখে যে সমস্ত মা বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর চূড়ান্ত রেগে যান ভুরু কুঁচকে নতুন প্রজন্মকে দোষারোপ করেন,তাদের কাছে একটাই অনুরোধ নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিন্তু ভীষণ ট্যালেন্টেড। তাদের সারাক্ষণ ফোন দেখার মধ্যে যে সবসময় খারাপ উদ্দেশ্য থাকে তা নয়, তাই উদ্দেশ্য দেখে তারপর তাকে বিচার করুন। আর সাত পাঁচ না ভেবে পছন্দের কেক, চকলেট আর ফিরনি অর্ডার দেওয়ার জন্য অবশ্যই টুকে রাখুন অমৃতার ফোন নম্বর -No – 9339912100