আজ থেকে এক সপ্তাহ আগে গত বুধবার বর্ষীয়ান অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের অকালপ্রয়াণ ঘটে। মাত্র ৫৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যান। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং সহকর্মীরা। তাই সাত দিন পার হয়ে গেলেও অভিনেতাকে নিয়ে নানা চর্চা উঠে আসছে সংবাদ মাধ্যমের পাতায়।
অভিষেক চট্টোপাধ্যায় তাঁর ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করেন তরুণ মজুমদারের বিখ্যাত পথভোলা সিনেমার মাধ্যমে। যার আত্মপ্রকাশ এরকম একজন কিংবদন্তি পরিচালকের হাত ধরে তার ইন্ডাস্ট্রিতে দৌড়তে অনেকখানি লম্বা হবে তা তার সহকর্মীরা অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট বুঝে গিয়েছিলেন। তাই তাকে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয়ে বড় পর্দা থেকে সরে আসতে হয়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার মৃত্যু নিয়ে নানা খবর লেখা হচ্ছে। তাকে নিয়ে আলোচনা যেন থামতেই চায় না। মৃত্যুর আগেও তিনি এতটা লাইম লাইটে আসেন নি। টেলিপাড়ায় নাকি গুঞ্জন রটেছে অভিনেতার মৃত্যুর পর তাকে অর্থকষ্টে ভুগছেন তার স্ত্রী এবং কন্যা। যদিও একটা সময় অভিনেতা যে চূড়ান্ত অর্থকষ্টে ভুগেছিলেন তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন একটি নন ফিকশন শো এর মঞ্চে। সেখানে তিনি এও বলেছিলেন যে লক্ষীর ভান্ডার ভেঙে তিনি খাবার কিনতেন। ইন্ডাস্ট্রির যখন তাকে রাজনীতির মাধ্যমে বসিয়ে দেয় সেই সময় তিনি বেছে নিয়েছিলেন বিকল্প রাস্তা। প্রত্যন্ত গ্রামে ছুটে যেতেন তিনি যাত্রা করতে। ডাকসাইটে নামে অভিনেতা কে কাজের অভাবে যাত্রাতেও নাম লেখাতে হয়েছিল। এমনকি বহু বাংলা সিরিয়ালে তিনি সামান্য ছোট চরিত্রেও অভিনয় করতেন। যদিও খড়কুটো এবং মোহরে তার চরিত্রের গুরুত্ব অনেকখানি ছিল।
তবে কি সত্যিই অভিনেতার অকাল প্রয়াণে অর্থকষ্টে ভুগছে তার পরিবার। এই বিষয়ে এবার মুখ খুললেন স্বয়ং তার স্ত্রী সংযুক্তা চ্যাটার্জী। অভিষেক চ্যাটার্জী ফেসবুক পেজে তিনি একটি লেখা পোস্ট করেন। এবং সেই পোষ্টের মাধ্যমে এই সমস্ত গুঞ্জনের ইতি টানেন তিনি।
তিনি সেই পোস্টে সকলের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন যে তাঁকে এবং তাঁদের একমাত্র কন্যা সাইনাকে একটু ব্যক্তিগত পরিসর দেওয়া হোক। এই মুহূর্তে সকলের কাছে তার এই একটাই অনুরোধ। তিনি জানান যে তারা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, শোকের মধ্যে রয়েছেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্যও তিনি বিনীতভাবে অনুরোধ করেন।
তিনি আরও লিখেন যে অভিষেক একজন মহৎ আত্মা ছিলেন। তাদের পরিবারকে কোন আর্থিক দুশ্চিন্তার মধ্যে তিনি ফেলে রেখে যাননি। তারা আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছেন এ কথা সংযুক্তা জানান। অভিষেক চ্যাটার্জী সম্পূর্ণ হৃদয় জুড়ে ছিল তার পরিবার। তিনি দায়িত্ব নিয়ে যাতে তার অবর্তমানে পরিবারের কোনো ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা করে রেখে দিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিষেক একজন দৃঢ় চরিত্রের মানুষ ছিলেন। তার মূল্যবোধ ছিল শিক্ষনীয়। নিজে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও কারুর কাছে কোনদিনও হাত পাতেন নি তিনি। তাই অভিনেতা চলে যাবার পরও যে তাদের কোনো আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন। সংযুক্তা একজন বিদেশী ফিনটেক ফার্মের কর্মচারী এবং তিনি মাসের শেষের বেশ মোটা অংকের একটি বেতন পেয়ে থাকেন। ইন্ডাস্ট্রি অনেকে যে অভিষেক চ্যাটার্জির পরিবারের প্রতি আর্থিক উদারতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এ কথা সম্পূর্ণ ভুয়ো বলে তিনি জানান। তিনি স্পষ্ট জানান যে কেউ তাদের কোনো আর্থিক সাহায্য করেনি এবং তাদেরও কোনদিনও কোন আর্থিক সাহায্যের দরকার পড়বে না। তিনি সবাইকে এই মিথ্যা গুজব এর থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেন।