GossipHoop Plus

উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে এসে কিভাবে বলিউডের ‘ডান্সিং কুইন’ হয়ে উঠেছিলেন অভিনেত্রী হেলেন

‘হেলেন’ এই নামটা শুনলে আপনার মাথায় প্রথম কি আসে? বেশির ভাগ সংখ্যক মানুষ বলবেন ক্যাবারে ডান্সের কথা, কেউ বলবেন সালমান খানের মা, আবার কেউ কেউ বলবেন অভিনেত্রী। আমরা জানি একজন মহিলা বিভিন্ন রূপে পরিচিতি পান। তাই একথা নতুন নয় যে হেলেন হলেন একজন দুর্দান্ত নৃত্য শিল্পী, যিনি নিজেই নিজের পায়ের তলার নরম মাটি শক্ত করেছিলেন। হেলেনের পিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মৃত্যুবরণ করেন। বার্মার মেয়ে তিনি। উদ্বাস্তু হয়ে বর্মা থেকে মুম্বইয়ে আসেন একরত্তি হেলেন। সেদিন সঙ্গে ছিল গর্ভবতী মা আর দুই ভাই বোন। প্রথমে আসেন কলকাতায়। ডিব্রুগড়ের হাসপাতালেই ছিলেন বেশ কিছুদিন। সেখানে ভাইয়ের মৃত্যুর পর ফেরেন মুম্বাইয়ে। ১৯৪৩ সালে আরবসাগরের তীরে নতুন জীবনযুদ্ধে নামেন আজকের হেলেন। জন্ম সেই ১৯৩৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। জন্মের পর থেকেই দারিদ্রতা দেখেছেন এই অভিনেত্রী। শেষে দারিদ্রতা জয় করেছেন।

বুকে একরাশ দুঃখ, পেটে খিদে আর বঞ্চনা নিয়ে নাম লেখালেন ক্যাবারে ডান্সার হিসেবে। মুম্বাই ফিরে এক বন্ধুর সহযোগিতায় সুযোগ পান বলিউড মুভিতে। কাজ পেলেন ‘শাবিস্তান’ ও ‘আওয়ারা’ ছবিতে। সমবেত শিল্পী হিসেবে প্রথমদিকে কাজ করতে লাগলেন হেলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ‘আলিফ লায়লা’ এবং পরের বছর ‘হুর-এ-আরব’ ছবিতে দেখা যায় হেলেনকে।

তবে বড় বড় ব্রেক ১৯৫৮ সালে গীতা দত্তের গলায় ‘মেরা নাম চিন চিন চু’ গানের সঙ্গে নাচ করে। তখন হেলেনের বয়স মাত্র ১৯। তাঁর ড্যান্সের ঝলক মন জয় করেছে বহু দর্শকের, পরিচালকের। এরপর ফিরে তাকাতে হয়নি হেলেনকে। ‘শোলে’-এর ‘মেহবুবা ও মেহবুবা’ আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। আজকের দিনে যেই আইটেম সঙ্গীত হয়, নায়িকারা যেভাবে পারফর্ম করেন তার এতটুকু তালিম সেইসময় পাননি হেলেন। নিজের দক্ষতায় নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি।

আপনি যদি ‘পিয়া তু অব তো আ জা’ ডান্স ভালো করে লক্ষ্য করে থাকেন তবে বুঝবেন হেলেনের রক্তেই ছিল ক্যাবারে ডান্সের শৈলী। সেইসময় হেলেনের জীবনে আসে পরিচালক পি এন অরোরা। দীর্ঘ ১৬ বছর তাঁরা একসঙ্গে থাকেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় নি। শেষে সেলিম খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান হেলেন। সেলিমের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পান।

এরপর দত্তক নেন অর্পিতা খানকে। যদিও সালমান খানের পরিবার সেলিম খানের এই কাজকে প্রথমদিকে মান্যতা দেননি। পরবর্তীতে এই হেলেন জায়গা করে নেয় খান পরিবারের হৃদয়ে। সালমান, আরবাজ, সোহেল ও আলভিরার মনে মাতৃত্বের পাকাপাকি জায়গা বানান হেলেন।

সেলিম খানের সঙ্গে হেলেনের আলাপ শ্যুটিং ফ্লোর থেকেই। এমনকি সেলিম খানের সাহায্যে বিভিন্ন ছবি করার সুযোগ পান হেলেন। ‘গুমনাম’, ‘শিকার’, ‘এলান’, ‘লহু কে দো রং’-এর মতো ছবিতে হেলেনের উপস্থিতি খুবই উল্লেখযোগ্য।

১৯৮৩ সালে অভিনয় জগত থেকে অবসর নেন হেলেন। বলিউডে আইটেম সং এখন যে হারে হয়, সেইসময় আইটেম সং এর এতটাও রমরমা ছিল না। তাছাড়া যারা ক্যাবারে ডান্স করত তাদেরকে সমাজ ঘৃণাই করত, কিন্তু বলিউডের এই আইটেম নম্বরে পথ প্রদর্শক এই ক্যাবারে কুইন হেলেনকে ২০০৯ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

Related Articles