Aindrila Sharma: কেমো নেওয়ার চারটে দিন পরেই পুজো, প্ল্যানিং সারছেন ‘সাহসী’ ঐন্দ্রিলা
শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর সারি ভেসে বেড়াচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির খেলায় মেতেছে আশ্বিন। মা আসছেন তাঁর সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে। মেয়ে আসছেন গিরিরাজ হিমালয় ও মা মেনকার কাছে। তাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় বসে থাকা টানা একটি বছর। অপেক্ষা করছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। কিন্তু সরস্বতী পুজোর সময় শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। ধরা পড়ল ক্যান্সার। কিন্তু এই অসুখ চিনিয়ে দিল এক অকৃত্রিম ভালোবাসাকে। তাঁর নাম সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। এর আগে কোনোদিন দুজন দুজনকে বলেননি ‘’ভালোবাসি”। চোরা স্রোত বাধা মানল না। সমস্ত সংস্কার পেরিয়ে সব্যসাচী শিবের মতোই আগলে রয়েছেন তাঁর পার্বতী ঐন্দ্রিলাকে। ভেঙে পড়া ঐন্দ্রিলা আবারও খুঁজে পেয়েছেন বাঁচার অর্থ। তাঁর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।
শুরু হয়েছে কেমো। 6 ই অক্টোবর কেমোর তারিখ। কেমো নেওয়ার পর শরীরটা জ্বলে যায় যেন। 11 ই অক্টোবর পুজো। এবার ঐন্দ্রিলা নিজের মতো করেই আনন্দ করবেন। নাই বা কোথাও যাওয়া হল, কারও হৃদয়ে বসত করা কি কম কথা! সব অভাব পূরণ করেছেন সব্যসাচী। সবাই পারে না একনিষ্ঠ প্রেমিক হতে। তিনি পেরেছেন। এখানেই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ঐন্দ্রিলার। তিনি ঠিক করেছেন, সুস্থ থাকলে জমিয়ে মজা করবেন। যদি সুস্থ না থাকেন? তাহলে পরের বছর সমস্ত আনন্দ সুদে-আসলে উশুল করে নেবেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পোশাক কেনা হয়ে গিয়েছে। সব্যসাচী দিয়েছেন একটি হলুদ রঙের কুর্তি। কথা দিয়েছেন, পুজোর কটা দিন একসঙ্গেই থাকবেন। ঐন্দ্রিলার ছোট পিসি দিয়েছেন লাল রঙের লম্বা ঝুলের পোশাক। কারণ ঐন্দ্রিলাকে লাল রং মানায়। তিনি যে লড়াকু মেয়ে।
View this post on Instagram
গত বছর অতিমারীর কারণে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি ঐন্দ্রিলা। এবার অসুস্থতার কারণে বাড়িতেই থাকছেন। তবে এই বছর মা, বাবা, দিদি, সব্যসাচী, আত্মীয়-স্বজন মিলে জমে উঠবে ঘরোয়া আড্ডা। ঐন্দ্রিলার দিদি বলেই দিয়েছেন বিরিয়ানি, পোলাও থেকে ভোগের খিচুড়ি অবধি সবকিছুই নিজে হাতে রেঁধে বোনকে খাওয়াবেন তিনি। শরীর যদি ভালো থাকে, তাহলে একদিন চলতে পারে মাটন। নাহলে চিকিৎসকের নির্দেশে ঐন্দ্রিলার মাটন খাওয়া তো বন্ধই হয়ে গেছে।
অথচ, একসময় ঐন্দ্রিলার পায়ের নিচে সর্ষে ছিল। পুজো উপলক্ষ্যে দেশের বাড়িতেও মুর্শিদাবাদে চলে যেতেন। সকালে ও সন্ধ্যায় দুই রকম পোশাক পরতেন। সকালে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে, বাইরে খেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি এসে পোশাক বদলেই আবার বেরিয়ে পড়তেন। বাড়ি ঢুকতেন রাতে। সব ধরনের পোশাক পরলেও একটা দিন মুর্শিদাবাদী সিল্কের জন্য বরাদ্দ থাকত। পুজোর মণ্ডপে কাউকে ভালো লাগলেও ডানপিটে মেয়ে ঐন্দ্রিলা ভয়ে বলতে পারতেন না। কিন্তু সব্যসাচীর সঙ্গে কখন যে সম্পর্ক জুড়ে গেল! ঐন্দ্রিলার জীবনের প্রথম প্রেম তিনিই। ‘ঝুমুর’-এর সেটে দুজনের আলাপ হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক পুজো যেন আরও বেশি রঙিন হয়ে উঠেছে। মুর্শিদাবাদে দশমীর দিন বিসর্জনের সময় গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত পাড়ার সবাই নাচতে নাচতে যেতেন। এরপর বাড়ী ফিরে বিজয়া দশমীর প্রণাম সেরে নাড়ু খাওয়া ছিল বাঁধা।
View this post on Instagram
ঐন্দ্রিলা, সব্যসাচীকে এই বছর আগে থাকতেই বলে রেখেছেন, সুস্থ থাকলে ফাঁকায় ফাঁকায় একদিন প্রতিমা দর্শন করতে যাবেন। কিন্তু সব্যসাচী ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে সবসময়ই চিন্তায় থাকেন। যদি একান্তই এই বছর প্রতিমা দর্শন না হয় তাহলে আগামী বছরের জন্য সব্যসাচীর কাছে তোলা থাকবে ঐন্দ্রিলার এই বায়না।
View this post on Instagram