আমির খান (Amir Khan) সচরাচর কোনো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হলেও পাবলিসিটি স্টান্ট পছন্দ করেন। অন্তত তাঁর ব্যবহার দেখে তাই মনে হয়। একসময় ‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু অন্যায়কে সমাজের সামনে তুলে ধরলেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজেও কথা দিয়ে কথা রাখেননি।
অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন মধ্যপ্রদেশের তাঁতশিল্পী কমলেশ কোরি (Kamalesh kori) -র পরিবার। প্রায় তের বছর আগে 2009 সালের ডিসেম্বর মাসে আচমকাই কমলেশের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন আমির। সঙ্গে ছিলেন করিনা কাপুর খান (Kareena Kapoor khan)। সেই সময় রাজকুমার হিরানি (Rajkumar Hirani) পরিচালিত ফিল্ম ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর শুটিং শেষ হয়েছে। এই ফিল্মে করিনা ছিলেন আমিরের নায়িকা। ‘থ্রি ইডিয়টস’ -এর প্রোমোশন করতে আমির ও করিনা বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছিলেন। প্রচারের অঙ্গ হিসাবে কমলেশের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন আমির ও করিনা।
View this post on Instagram
আমির ও করিনাকে যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন কমলেশরা। তাঁরা মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি শহরের প্রাণপুর গ্রামে একটি মাটির বাড়িতে থাকেন। কমলেশ ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁর বোনা তাঁতের কাপড় বিক্রি করে সংসার চলে। ফলে অপ্রত্যাশিত ভাবে আমির ও করিনাকে দেখে খুশি হয়েছিলেন কমলেশ, তাঁর স্ত্রী কমলা বাঈ (Kamla Bai) ও পরিবারের বাকি সদস্যরা। কমলার হাতের রান্না করা রুটি-তরকারি খেয়ে যথেষ্ট প্রশংসা করেছিলেন আমির ও করিনা। সেদিন মাটির দাওয়ায় মাদুরে বসে আলাপচারিতা করেছিলেন তাঁরা। কমলেশ ওই তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে মুম্বইয়ের ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণ করেছিলেন আমির। তিনি জানিয়েছিলেন, কমলেশদের যাতায়াতের খরচ তিনি বহন করবেন। এমনকি কমলেশের রোজগার যাতে বাড়ে সেই ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমির। তিনি বলেছিলেন, কমলেশের জন্য মুম্বইয়ে একটি শোরুম খুলে দেবেন তিনি। আমির বলেছিলেন, ওই শোরুমের মাধ্যমে নিজের তাঁতে বোনা কাপড় বেচতে পারবেন কমলেশ ওই তাঁর গ্রামের তাঁতশিল্পীরা। শোরুমে কেনাবেচা ও মালপত্র সরবরাহের দায়িত্ব কমলেশের থাকবে বলে ঠিক ছিল। এমনকি তাঁকে আমির ও করিনা নিজেদের নাম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
সেদিন কমলেশকে তাঁর হাত থেকে ‘এ কে’ খোদাই করা সোনার আংটি খুলে কমলেশের হাতে পরিয়ে দিয়ে আমির তাঁকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে আলিঙ্গন করেছিলেন। এমনকি তাঁকে নিজের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন যাতে কমলেশ তাঁর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন। কমলেশের কাছ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা করে দুটি শাড়ি কিনে তার একটি করিনাকে উপহার দিয়েছিলেন আমির। ওই দিনের পর কমলেশ বিখ্যাত হলেও তাঁর আয় বাড়েনি। তাঁর পরিবারের দাবি, মুম্বইয়ের শোরুম হয়নি এবং ওই দিনের পর থেকে আমিরের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে কেউ ধরেননি। লকডাউনে অনেকের মতো কাজ হারিয়েছিলেন কমলেশ। এরপর করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি।
অর্থাভাবে সন্তানদের স্কুল ছাড়াতে বাধ্য হয়েছেন কমলা। তিনি জানিয়েছেন, মুম্বইয়ে গিয়ে তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লেখার পর আমির তাঁর কোনো প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। কমলা কোনোমতে বিড়ি বেঁধে আয় করে সংসারকে ধরে রেখেছেন। তবু আমিরের দেওয়া আংটি তিনি বেচেননি। কারণ তাঁর মতে, আমির তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। সেই দিনের সাক্ষী এই আংটি। শত অভাবেও ওই দিনটি আজও কমলার কাছে স্মরণীয়। এই ঘটনায় এখনও অবধি আমির কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
View this post on Instagram