অঙ্কুশ হাজরা (Ankush Hazra) বর্তমানে টলিউডের প্রথম সারির নায়ক-প্রযোজকদের মধ্যে অন্যতম হওয়ার পথে এগিয়ে গেলেও তাঁর যাত্রাপথ সহজ ছিল না। কম ছিল না অঙ্কুশের লড়াই। বর্ধমানের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে অঙ্কুশের কোনো ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। বর্ধমানের হোলি রক স্কুল ও পরে ইস্ট-ওয়েস্ট মডেল স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতায় আসেন তিনি। চোখে ছিল অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু অপর পাঁচ জন বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের মতো তাঁকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি পড়াশোনা ছেড়ে অনিশ্চিত পথে পা বাড়ানোর।
ফলে কলকাতায় আসার আগে দুর্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেক করেছিলেন অঙ্কুশ। তবে কলকাতায় এসেও হেরিটেজ ইনস্টিটিউট থেকে বিবিএ সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি চলছিল টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় অডিশন দেওয়ার কাজ। সেই সময় টলিউডে চলছে দেব (Dev) ও জিৎ (Jeet)-এর যুগ। একটি আটপৌরে চেহারার ছেলেকে নায়ক হিসাবে ভাবার কথা কল্পনাতেও আসেনি বহু পরিচালকের। ফলে অঙ্কুশকে অনেক ধাক্কা খেতে হয়েছে চলার পথে। যত আঘাত পেয়েছেন, ততই মজবুত হয়ে উঠেছেন তিনি।
2010 সালে পীযূষ সাহা (Pijush Saha) পরিচালিত ফিল্ম ‘কেল্লাফতে’-র মাধ্যমে টলিউডে ডেবিউ করেছিলেন অঙ্কুশ। কিন্তু এরপর টানা দুই বছর বসে থাকতে হল তাঁকে। কারণ তাঁর প্রথম ফিল্ম মারাত্মক ব্যবসা দিতে পারেনি বক্স অফিসকে। 2012 সালে অঙ্কুশের কেরিয়ারের খরা কাটাতে এগিয়ে এলেন রাজীব বিশ্বাস (Rajiv Biswas)। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee) তখন তাঁর স্ত্রী। রাজীবের পরিচালনায় বাংলা ফিল্ম ‘ইডিয়ট’-এ শ্রাবন্তীর বিপরীতে অভিনয় করলেন অঙ্কুশ। নবাগত নায়ককে এবার লক্ষ্য করলেন দর্শকদের একাংশ। 2013 সালে অশোক পতি (Ashok Pati) পরিচালিত ফিল্ম ‘খিলাড়ি’-তে নুসরত জাহান (Nusrat Jahan Ruhi)-র বিপরীতে দেখা গেল অঙ্কুশকে। এই ফিল্মের প্রযোজক ছিলেন অশোক ধানুকা (Ashok Dhanuka)। কিন্তু 2014 সাল অঙ্কুশের কেরিয়ারে তৈরি করল মাইলস্টোন। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ফিল্ম ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ সুপারহিট হল। এই ফিল্মে অঙ্কুশের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী (Subhashree Ganguly)।
এরপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। মুম্বইয়ে গ্রুমিং করে আবারও কলকাতায় ফিরেছেন অঙ্কুশ। একের পর এক ফিল্মে অভিনয়ের পাশাপাশি তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা। সাম্প্রতিক কালে জি ফাইভের ওয়েব সিরিজ ‘শিকারপুর’-এর মাধ্যমে ওটিটিও আর অধরা নেই তাঁর। সঞ্চালনা করছেন জি বাংলার ডান্স রিয়েলিটি শো ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এ। নিজের ব্যাপ্তি প্রকাশ করেছেন অঙ্কুশ। সফলতার চূড়া ছুঁলেও কোথাও এখনও রয়ে গিয়েছেন সেই আটপৌরে ছেলেটি যিনি দিনের শেষে একবার ফিরে দেখতে চান নিজের শৈশবকে। হয়তো এই কারণেই ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করেন নিজের স্কুল জীবনের ছবি। সেখানে নায়কোচিত নন, অঙ্কুশ চোখে চশমা, গায়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত এক হাস্যময় কিশোর যার মনের মধ্যে রয়েছে একরাশ ইচ্ছে ডানা।
View this post on Instagram