অনুরাধা পড়োয়াল (Anuradha Paudwal) ও অলকা ইয়াগনিক (Alka yagnik)-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা কারও অজানা নয়। দুজনেই মাতিয়ে রেখেছিলেন নব্বইয়ের দশক। ধার্মিক গান মানেই এখনও অবধি অনুরাধাই অগ্রগণ্য। তবে প্রকৃতপক্ষে, অনুরাধা ও অলকা যতই একে অপরের দিকে আঙুল তুলুন তাঁদের কেরিয়ারের শুরু প্রায় একসাথে হলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল রাস্তা। এমনকি দুই জনের কন্ঠ ভালো করে শুনলে বোঝা যাবে, তাঁদের দুজনের গানের পরিধিও সম্পূর্ণ আলাদা। কিংবদন্তী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) সেই সময় বলিউডে রাজত্ব করছেন, অনুরাধা এলেন গায়িকা হিসাবে।
View this post on Instagram
বরাবরের মতো নতুন গায়িকার তুলনা চলতে থাকল এক কিংবদন্তী গায়িকার সাথে। একসময় লতা কিন্তু নিজেও এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের একমেবাদ্বিতীয়ম গায়িকা। অনুরাধাকেও সেই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল। উপরন্তু তাঁর গাওয়া গানগুলি দ্বিতীয়বার লতাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছিল। অপরদিকে অলকার কন্ঠ বরাবর পছন্দ ছিল বলিউডের তাবড় সুরকারদের। ‘তেজাব’-এর আইকনিক ‘এক দো তিন’ পাল্টে দিয়েছিল তাঁর জীবনের গতি। ধীরে ধীরে লতা কাজ কমিয়ে দেন। তাঁর সাথে যাঁরা কাজ করতেন, সেই সুরকারদের অনেকেই বয়সজনিত কারণে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যাচ্ছিলেন। অনেকের মৃত্যু হয়েছিল।
এই সময় ইন্ডাস্ট্রি ষাট শতাংশ মার্কেট ছিল টি-সিরিজ মিউজিক কোম্পানির। টি-সিরিজের কর্ণধার ছিলেন গুলশন কুমার (Gulshan Kumar)। এই সময় টি-সিরিজের সাথে অনুরাধা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন যাতে লেখা ছিল এই সংস্থা ভিন্ন তিনি অন্য কোথাও গাইতে পারবেন না। এমনকি এই সংস্থার সব গান গাইবেন অনুরাধা। কোনো সুরকার টি-সিরিজের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করলে তাঁকে বলে দেওয়া হত, তাঁর সুরে সব গান গাইবেন অনুরাধা। শোনা যায়, এই চুক্তির নেপথ্যে ছিল গুলশন কুমারের সাথে অনুরাধার সম্পর্ক। গুলশনের বিশেষ বান্ধবী ছিলেন তিনি। এর জেরেই ‘দিল’ ফিল্মে অলকার গাওয়া গান বাদ দিয়ে দ্বিতীয়বার অনুরাধাকে দিয়ে সবকটি গান গাওয়ানো হয়। ক্ষুব্ধ অলকা মিডিয়ায় জানান, তাঁকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি অনুরাধাও তাঁকে ফোন করে কিছু জানাননি।
View this post on Instagram
‘দিল’ -এ মাধুরী দীক্ষিত (Madhuri Dixit Nene)-র লিপে অনুরাধার সবকটি গান হিট হলে সুরকাররা অনুরাধাকেই মাধুরীর লিপে গান গাওয়ার জন্য মনস্থ করেন। এমনকি অনুরাধাও বলতে থাকেন, মাধুরীর লিপে তাঁর কন্ঠ মানায়। সেই সময় টিপস ও ভেনাস সংস্থার সাথে কাজ করছেন অলকা। হঠাৎই অনুরাধা প্লে ব্যাক থেকে সরতে থাকেন। তিনি ক্রমশ ভজনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছিলেন। শোনা যায়, অনুরাধার সাথে গুলশনের সম্পর্কে এই সময় চিড় ধরা শুরু হয়। কিন্তু সেই চিড় মেরামত করেছিল ‘ইতিহাস’। এই ফিল্মের সবকটি গান অলকা গেয়েছিলেন। কিন্তু এই ফিল্মের সুরকার দিলীপ সেন (Dilip Sen) ও সুমিত সেন (Sumit Sen) জানিয়েছেন, গানগুলি বিক্রি হচ্ছিল না। ফলে তাঁরা টি-সিরিজের দ্বারস্থ হন। গুলশন তাঁদের শর্ত দিয়েছিলেন, অনুরাধাকে দিয়ে আবারও সবকটি গান গাওয়াতে হয়। রাজি হননি দিলীপ ও সুমিত। পরে তাঁরা ‘ইতিহাস’-এর তিনটি গান অনুরাধাকে দিয়ে গাওয়ান ও বাকি গানগুলি রাখা হয় অলকার কন্ঠে। সেই সময় মুম্বইতে ছিলেন না অলকা।
পরবর্তীকালে 1997 সালে অলকা একটি সাক্ষাৎকারে অনুরাধার দিকে আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, অনুরাধা তাঁকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন। কিন্তু অনুরাধা এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন গুলশন কুমার। এরপর থেকেই অনুরাধার হাতে কমতে থাকে কাজ। টি-সিরিজে অনুরাধার আধিপত্য এতটাই ছিল যে, তিনি এই সংস্থায় কাজ করতে আসা সুরকারদের নির্দেশ দিতেন। তা মানতে হত সুরকারদের। এমনকি অনুরাধার পারিশ্রমিক ছিল ফিল্ম প্রতি পঁচিশ লক্ষ টাকা।
কিন্তু গুলশনের মৃত্যুর পর অনুরাধার এই আধিপত্য সহ্য করতে রাজি ছিলেন না সুরকাররা। এমনকি গুলশনের পরিবারের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন অনুরাধা। অতি অহংকারের কারণেই পতন ঘটল অনুরাধার। বলিউড থেকে দূরে সরতে হল তাঁকে।
View this post on Instagram