সবসময় দর্শক এই অভিনেত্রীকে হতাশার চোরাবালিতে ডুবে থাকতে দেখেছেন দর্শক। কে এই অভিনেত্রী? বাস্তব জীবনেও কী এই হতাশার চোরাবালিতে নিমজ্জিত নাকি প্রাণোচ্ছল ভাবে নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন।
নাম তাঁর রিম্পি কৌর গিল,কিন্তু অভিনয়ের স্বার্থে নাম পাল্টে হন বলিউডের ‘মাহি’ গিল। ১৯৭৫ সালে ১৯ ডিসেম্বরে চণ্ডীগড়ে এক জাঠ পরিবারে মাহির জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন পাঞ্জাব সরকারের অর্থমন্ত্রকের উপদেষ্টা এবং মা ছিলেন কলেজের লেকচারার। তাঁর দুই ভাই নবনীত গিল এবং শিবেন্দ্র গিল নিয়ে ছিলেন সুখী পরিবার।
স্কুলের পরে মাহি চণ্ডীগড়ের কলেজ থেকে কলাবিদ্যায় স্নাতক হন। তারপর নানা বাধা পেরিয়ে নাটকে স্নাতকোত্তর করতে ভর্তি হন পঞ্জাব বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। কিন্তু এই সময়ে মাহি জীবনে একটি চরম ভুল করেন। সিনেমায় অভিনয় শুরুর আগে থেকেই মাহি বিবাহিত ছিলেন। কলেজে পড়ার সময় বাড়ির অমতে বিয়ে করেন আর সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। পরে মাহি নিছক ‘ছেলেমানুষি’ বলে আখ্যা দেন।
তারপরই পঞ্জাবি ছবি ‘হাওয়ায়েঁ’-তে মাহি প্রথমে ডেবিউ করেন। আর বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’। সুধীর মিশ্র পরিচালিত এই ছবির নায়ক নায়িকা ছিলেন সাইনি আহুজা এবং সোহা আলি খান। এই ছবিতে খুবই ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মাহি।
এরপর অভিনয়ে জগতে বড়ো ব্রেক পায় পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের হাত ধরে। একদিন এক জন্মদিনে মাহির প্রাণবন্ত নাচ দেখে তিনি তাঁর পরবর্তী সিনেমার হিরোইন করার কথা ঠিক করেন। এরপর ‘দেব ডি’ চলচ্চিত্রে পারোর ভূমিকায় অভিনয় করে একদিকে মাহির অভিনয় প্রশংসিত হয় দর্শকমহলে অন্যদিকে সমালোচকরা মিলে সমালোচনা করেছেন।
দেব ডি’ ছবিতে অভিনয়ের পরে মাহিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর মাহির কাছে বেশ কিছু সুযোগ আসতে শুরু করে। কিন্তু প্রতি ছবিতেই তাঁর জন্য শুধু সাহসী দৃশ্যই ছিল।অন্যদের মতো স্বাধীন ভাবে চরিত্র ঠিক করার স্বাধীনতা তিনি পাননি। পরে একদিন মাহি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁকে কোনো চিত্রনাট্য দেওয়া হত না। শুধু এইটুকু বলা হত,কিছু কিছু সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে।
২০০৮ সালেই অনুরাগ কশ্যপের আর একটি ছবি ‘গুলাল’-এ মাহির অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটেছে। অনুরাগ কশ্যপের ভাই অভিনব কশ্যপের ছবি ‘দবাং’-এ অভিনয় করেন মাহি। এছাড়া ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’-ছবিতে তাঁর ‘মাধবী’ চরিত্রটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
মাঝে একসময়ে পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়ার সঙ্গে মাহির সম্পর্ক নিয়ে বহু গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে। ক্রমে ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে ওঠে তাঁদের প্রেম। মাহির অভিনয়ে মুগ্ধ তিগমাংশু তাঁর ‘পান সিংহ তোমর’ এবং ‘সাহেব বিবি গ্যাংস্টার রিটার্নস’ ছবিতেও নিজের জায়গা করেন বলে অভিযোগ করেন অনেক সমালোচক। ‘বুলেট রাজা’ ছবিতে মাহির জন্য বিশেষ একটি গানের সিকোয়েন্স রাখেন তিগমাংশু। এখানেই শেষ নয়। শুধু মাহির কথা ভেবেই নাকি তিগমাংশু পরিচালনা করেন ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার থ্রি’ ছবি। কিন্তু বক্স অফিসে ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
আর এই ব্যর্থতার দায় পরিচালক নিজেই তিগমাংশু নিজেই মাথা পেতে নেন।অনেল কোস্টারদের অভিযোগ ছিল,পরিচালক শুধু মাহিকে গুরুত্ব দিতে বাকি কুশীলবদের ভূমিকা ছোট করে দিয়েছিলেন। মাহির চরিত্রের জন্য এই ছবি সফল হয়নি বক্স অফিসে। তিগমাংশু ছাড়াও মাহির সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গিয়েছে রণদীপ হুডার। তবে নিজের সব সম্পর্ক গোপন রখতে ভালোবাসেন অভিনেত্রী। তাই কোনো সম্পর্কই মাহি স্বীকার করেননি।
মাহি গিল সবথেকে বেশি চমক দেন ২০১৯ সালে তাঁর ফ্যানেদের। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে মেয়ের সাথে ছবি দিয়ে। তাঁর মেয়ের বয়স নাকি সাড়ে তিন বছর! এর আগে বলিউডে মাহির সন্তানের কথা কেউ জানতেন না। আর এরপরই তিনি তাঁর বয়ফ্রেন্ডের কথা খোলসা করেন। অবশ্য তাঁর মনের মানুষের নাম প্রকাশ্যে আনেননি। শুধু বলেছেন ব্যবসার কারণে তিনি গোয়ায় থাকেন।
২০১৬ তে মাহির মেয়ের জন্ম।মেয়ে ভেরোনিকা নিয়ে কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। মাঝে মাঝেই গোয়া যান প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে। আপাতত লিভ ইন এ আছেন।ভবিষ্যতে বিয়ের কথা ভাবতে পারেন।তবে এখন আলটা বালাজির কিছু ওয়েব সিরিজ আর মেয়ের সাথে গুছিয়ে সময় কাটাচ্ছেন পারো।