মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) পরবর্তী সময়ে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাঠামো ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে উঠেছিল। সেই সময় অনিল চট্টোপাধ্যায় (Anil chatterjee) ও আরও কিছু ফিল্ম জগতের ব্যক্তিত্বের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের সংগঠন যার বর্তমান গালভরা নাম ‘ফেডারেশন’। এই মুহূর্তে শিল্পী ও কলাকূশলীদের সংগঠনের তরফে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হলেও গোড়ার দিকে অত্যন্ত কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন মানুষগুলি। মহানায়কের মৃত্যুর পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee), শমিত ভঞ্জ (Shamit Bhanja)-দের মতো নায়করা থাকা সত্ত্বেও প্রযোজক-পরিচালকদের অধিকাংশ রিস্ক নিয়ে সিনেমা বানাতে চাইছিলেন না। ফলে কাজ না পেয়ে অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় সেই সময় প্রচুর কূশীলব প্রয়াত হন। অনেকে পরিবর্তন করেন পেশা। ইন্ডাস্ট্রির দূর্দিনে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee), চিরঞ্জিৎ (Chirajneet), তাপস পাল (Tapas Pal)-রা একের পর এক ফিল্মে অভিনয় করতে শুরু করেন।
অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)-র আবির্ভাব ঘটে। এই ধরনের ফিল্মগুলি সাধারণতঃ গ্রামবাংলা বিখ্যাত হয়েছিল। তবে রবিবারের বিকালে ড্রয়িং রুমের টেলিভিশনে বাংলা দূরদর্শনে যখন এই ফিল্মগুলি সম্প্রচারিত হত, তখন শহুরে মানুষ নিছক কৌতুহলবশতঃ বসে পড়তেন সিনেমা দেখতে। এভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিক টক শোয়ে প্রসেনজিৎ-কে ইন্ডাস্ট্রি বলার ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন চিরঞ্জিৎ। তিনি বলেন, তাহলে তাপস ও তিনি কি করেছেন! অনেকেই মনে করেন, প্রসেনজিৎ অহঙ্কারী। তিনি নিজেকে ইন্ডাস্ট্রি বলে পরিচয় দেন। কিন্তু তা নয়।
সৃজিত মুখার্জী (Srijit Mukherjee) পরিচালিত ফিল্ম ‘অটোগ্রাফ’-এ প্রসেনজিৎ-এর সংলাপ ছিল “আমি অরুণ চ্যাটার্জী, আমি ইন্ডাস্ট্রি’। সংলাপটি যথেষ্ট বিখ্যাত হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকেই প্রসেনজিৎ সম্পর্কিত লেখায় এই সংলাপটি ব্যবহার করা হতে থাকে। সম্প্রতি ইন্সটাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করে প্রসেনজিৎ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন।
ভিডিওর শুরুতে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘অটোগ্রাফ’-এর বিখ্যাত সংলাপ। এরপরেই প্রসেনজিৎ ক্ষমা চেয়ে নেন ও বলেন, তিনি কখনও নিজেকে ইন্ডাস্ট্রি বলে দাবি করেননি। এটি ছিল নিছকই সংলাপ যা সৃজিত ব্যবহার করেছিলেন ‘অটোগ্রাফ’-এ। মজা করে তিনি বলেন, তাঁকে গালাগালি না দিতে। কিন্তু একটু বিচার করলে দেখা যাবে, চিরঞ্জিৎ একসময় সরে গিয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। তাপস রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রসেনজিৎ কিন্তু লাগাতার ইন্ডাস্ট্রির ভার বহন করে গিয়েছেন। প্রয়োজনে এমন ফিল্মেও অভিনয় করেছেন যা বর্তমানে হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে। কারণ প্রসেনজিৎ জানতেন, তিনি যদি এই ফিল্মে অভিনয় না করেন, ফিল্মটি তৈরি হবে না। কর্মহীন হয়ে পড়বেন টেকনিশিয়ানদের একাংশ। আবারও দেখা দেবে প্রতিকূলতা। সেই সময় প্রসেনজিৎ-এর এই সিদ্ধান্ত আত্মত্যাগের সমান। এরপরেও কি বলা যাবে না তিনিই ইন্ডাস্ট্রি?
View this post on Instagram