Joynagarer Moya: এবার থেকে শীত আর মিঠে নয়, বিলুপ্তির পথে জয়নগরের মোয়া!
শীতের আমেজ পড়তেই বাংলার গ্রামে গঞ্জে বসেছে নলেন গুড়ের মহল। খেজুর গুড়ের গন্ধে ম-ম করার দিন হয়তো এসেই গেছে বাঙালির দোরগোড়ায়। আর এই নলেন গুড় দিয়েই তৈরি হয় নানা রকমের মিষ্টি। তবে সব মিষ্টির রাজ সিংহাসনে আজও বিরাজমান জয়নগরের মোয়া। কিন্তু ভোজনরসিক বাঙালির জন্য এবার দুঃসংবাদ শোনালেন ব্যবসায়ীরা। এবার নাকি বন্ধ হতে চলেছে জয়নগরের মোয়া তৈরি। এটা কি মেনে নিতে পারবে শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসের ফরমান?
তখন শ্রীচৈতন্যদেবের সময়কাল। তখনই এমন এক শীতের সন্ধ্যায় প্রথম তৈরি হয় অমৃতসম এই মিষ্টান্ন। কিন্তু কে তৈরি করেছিলেন এই মিষ্টি? কোথায় প্রথম তৈরি হয় হয় মোয়া? এর সঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের সম্পর্কই বা কি? জনশ্রুতি অনুসারে অমৃতসম এই মোয়ার আবিষ্কারক হলেন জয়নগর শহরের নিকটবর্তী বহরু গ্রামের জনৈক যামিনীবুড়ো। লোকমুখে শোনা যায়, একটি অনুষ্ঠানে তিনি নিজের খেতে উৎপাদিত কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া প্রস্তুত করে একটি স্থানীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন। সেই অনুষ্ঠানে নাকি এসেছিলেন যুগাবতার শ্রীচৈতন্যদেব। তিনিও নাকি সেই মোয়া খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছিলেন। আর সেই সময় থেকেই এই মোয়া জয়নগর শহরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গোটা বাংলায়।। শুরু হয় ব্যবসাও। ইতিহাস বলে, ১৯২৯ সালে পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ওরফে বুঁচকিবাবু এবং নিত্যগোপাল সরকার নামে দুই ব্যক্তি জয়নগর শহরে তাদের মোয়া তৈরীর কারখানা ও দোকান স্থাপন করেন।
তবে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার এই প্রাচীন মিষ্টি। তার কারণ রয়েছে অনেক। জনপ্রিয়তা থাকলেও সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণেই হারিয়ে যেতে বসেছে জয়নগরের এই সুখ্যাতি। প্রসঙ্গত, মোয়া তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম মূল উপাদান হল নলেন গুড়। এই গুড় তৈরিতে যতটা শ্রম দিতে হয়, ততটা লাভের মুখ দেখেন গুড় নির্মাতারা। ফলে নলেন গুড় তৈরিতে অনিহা দেখা দিয়েছে কারিগরদের মধ্যেও। জয়নগর, কুলতলী, বাসন্তী, গোসাবার গুড়ের মহলদাররা একে একে যুক্ত হচ্ছেন অন্য পেশায়। আর এতেই দেখা দিচ্ছে নলেন গুড়ের অভাব। বর্তমানে যেরকম গুড় বাজারে মিলছে, তাতে নেই সেই সুগন্ধ, নেই স্বাদ; পুরোটাই ভেজাল। এর ফলে ধীরে ধীরে আভিজাত্য হারাচ্ছে জয়নগরের মোয়া। বিলুপ্তির পথে হাঁটা শুরু করেছে বাংলার প্রাচীন এই মিষ্টান্ন।
তবে বাংলা যেমন হারিয়ে যেতে দেয়নি শক্তিগড়ের ল্যাংচা কিংবা বিষ্ণুপুরের মোতিচুর কিংবা বাঁকুড়ার প্যাঁড়াকে, একইভাবে কি ধরে রাখতে পারবে জয়নগরের মোয়াকে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। তবে প্রাচীন এই মিষ্টান্ন হারিয়ে গেলে যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই অমৃতসম স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।