বাঙালির ঐতিহ্যে আরও এক কালো অধ্যায় যুক্ত হল কিংবদন্তী শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)-র প্রয়াণের দেড় বছর কাটতে না কাটতেই। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল স্বর্ণযুগের শিল্পীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেন্স এলাকার এই বাড়ির গলির পরিচয় ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির গলি নামেই। ডি/613 নম্বরের এই বাড়িতেই আজীবন বসবাস করেছেন সন্ধ্যা। প্রয়াণের এক বছর আগে অবধিও গানের রেওয়াজ করতেন তিনি বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু দেড় বছরের ব্যবধানে তা হয়ে গেল স্মৃতি।
বাড়িটি তৈরি করেছিলেন সন্ধ্যার সুরকার স্বামী শ্যামল গুপ্ত (Shyamal Gupta)। শ্যামল ও সন্ধ্যার দাম্পত্য জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে এই বাড়িতেই যার ফলকে নাম লেখা ছিল এস.গুপ্ত। গত বছর সন্ধ্যার প্রয়াণের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, সংরক্ষণ করা হবে প্রয়াত শিল্পীর বাড়ি ও তাঁর যাবতীয় সংগ্রহ। কিন্তু এদিন লেক গার্ডেন্সের সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির গলি সাক্ষী রইল এক মর্মান্তিক দৃশ্যের। সন্ধ্যার সঙ্গীতগুরু উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ (Ustad Bade Gulam Ali Khan)-এর সাদা-কালো ছবি ধ্বংসস্তুপে পড়ে আছে অবহেলায়। নিজের জীবদ্দশায় সঙ্গীতগুরুকেই ভগবানের আসনে বসিয়েছিলেন সন্ধ্যা। তাঁর বাড়ির শূন্যস্থান জুড়ে আজ শুধুই একরাশ হাহাকার।
সন্ধ্যার দত্তক কন্যা সৌমি (Soumi) জানিয়েছেন, তিনি স্বেচ্ছায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি তুলে দিয়েছেন প্রোমোটারের হাতে। তা ভেঙে উঠতে চলেছে ফ্ল্যাট। সৌমির এই নির্বিকার ব্যবহারে ক্ষুব্ধ অঞ্চলের অধিবাসীরাও। ওই এলাকায় বাস করেন শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-ও শ্রদ্ধা করতেন কিংবদন্তী শিল্পীকে। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি বিক্রি হয়ে যেতে চলেছে বাঙালির সঙ্গীতের তীর্থক্ষেত্র। যদিও সৌমির এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত, কিন্তু তাঁর মা যখন বাঙালির একান্ত আপন, তখন অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সৌমির ভেবে দেখা উচিত ছিল।
প্রোমোটারি রাজের দাপটে হারিয়ে যেতে চলেছে বাঙালির স্থাপত্যের নিদর্শন। কিন্তু এবার বোঝা গেল, বাঙালি নিজেই তাদের হেরিটেজ হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। সত্যিই কি অধিগ্রহণ করা যেত না সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি? বাঁচিয়ে রাখা যেত না তাঁর শেষ স্মৃতিচিহ্নগুলিকে?