কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন দূরদর্শনের বিখ্যাত পৌরাণিক ধারাবাহিক ‘মহাভারত’-এর শকুনির চরিত্রাভিনেতা গুফি পেইন্টাল (Gufi Paintal)। বর্ষীয়ান অভিনেতার সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি। কিন্তু তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও শোকসংবাদ বলিউড থেকে। প্রয়াত হলেন ‘বুনিয়াদ’ খ্যাত অভিনেতা মঙ্গল ধিলোঁ (Mangal Dhillon)। 11 ই জুন, রবিবার লুধিয়ানার ক্যানসার হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
View this post on Instagram
আশির দশকে হিন্দি দূরদর্শনের যথেষ্ট বিখ্যাত ধারাবাহিক ছিল ‘বুনিয়াদ’। সেই সময় ঘরে ঘরে ছিল না টেলিভিশন। পাড়ায় দশটি পরিবারের মধ্যে হয়তো একটি বাড়িতে টেলিভিশন থাকত। টেলিভিশনকে তখন একপ্রকার বিলাসিতা বলেই মনে করা হত। কালার টিভি নয়, তখন টেলিভিশন ছিল সাদা-কালো। তবু ‘বুনিয়াদ’ দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় ফাঁকা হয়ে যেত রাস্তাঘাট। কারণ ‘বুনিয়াদ’-এর কাহিনী দর্শকদের একাংশকে মনে করিয়ে দিত তাঁদের শিকড়ের কথা। এই ধারাবাহিকের অন্যতম অভিনেতা ছিলেন মঙ্গল ধিলোঁ। তবে তৎকালীন সময় সাধারণ পরিবারের ছেলের অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন পরিবারের সদস্যরাই। পঞ্জাবের ফরিদকোট জেলার ওয়ান্দর জাটানায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মঙ্গলের।
কোটকপুরার একটি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন মুক্তসর সরকারি কলেজে। অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন মঙ্গল। ফলে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে তিনি পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার বিভাগে যোগদান করেন। পাড়ি দেন দিল্লিতে। সেখানে নিয়মিত থিয়েটার করতে শুরু করেন মঙ্গল। 1980 সালে অভিনয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন তিনি। থিয়েটারের অভিনয়ের মাধ্যমেই নজর কেড়েছিলেন মঙ্গল। সেই সময় সবেমাত্র গুটি গুটি পায়ে চলা শুরু করেছে দূরদর্শন। 1986 সালে ‘কথা সাগর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশনে অভিনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলের। যথেষ্ট ব্যক্তিত্বময় অভিনেতাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ‘বুনিয়াদ’-এর পর। ভার্সেটাইল অভিনেতা মঙ্গল 1993 সালে ‘জুনুন’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে সুমের রাজবংশের চরিত্রে প্রমাণ করেছিলেন নিজেকে।
View this post on Instagram
এর মধ্যে 1988 সালে ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ ফিল্মের মাধ্যমে বড় পর্দায় ডেবিউ করেন তিনি। হিন্দির পাশাপাশি পঞ্জাবি ফিল্মেও অভিনয় করেছেন মঙ্গল। প্রযোজক হিসাবেও সফল ছিলেন তিনি। তবে মঙ্গলের প্রযোজনা সংস্থা থেকে সাধারণতঃ পরীক্ষামূলক ধর্মীয় ফিল্ম বানানো হত। শেষবার 2017 সালে ‘তুফান সিং’ ফিল্মে দেখা গিয়েছিল মঙ্গলকে।
অভিনয় জীবনে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একাধিক পুরস্কারে। 2006 সালে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে পেয়েছিলেন বিশেষ সম্মান। এছাড়াও পঞ্জাব সরকারের তরফে ‘খালসা’ ফিল্মের জন্য ‘বাবা ফরিদ পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু 2017 সালের পর থেকে মঙ্গলের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। ফুসফুসে থাবা বসিয়েছিল মারণ রোগ ক্যান্সার। বহু চিকিৎসার পরেও তা ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে। গত এক মাস ধরে লুধিয়ানার ক্যান্সার হাসপাতালের বিছানায় মঙ্গল লড়াই করেছেন মারণ রোগের সাথে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। 11 ই জুন যাবতীয় কর্মকান্ডকে পিছনে ফেলে রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন মঙ্গল। তাঁর প্রয়াণে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকজ্ঞাপন করেছেন বিনোদন জগতের কূশীলবদের একাংশ।
View this post on Instagram