2022 সালে টলিউডের নায়িকাদের ক্ষেত্রে ঘনিয়ে এসেছে একের পর এক দুর্যোগ। চলতি বছরের মে মাসে মৃত্যু ঘটেছে পরপর তিন জন অভিনেত্রীর। এঁদের মধ্যে পল্লবী দে (Pallavi Dey) ছিলেন অন্যতম জনপ্রিয়। বাকি দুইজনের নাম বিদিশা (Bidisha) ও মঞ্জুষা (Manjusha)। বিদিশা ভেঙে পড়েছিলেন মানসিক অবসাদে। তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। মঞ্জুষার কাছে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল উচ্চাশা। তিন অভিনেত্রীই শেষ অবধি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু গত এক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-র বিশেষ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জী (Arpita Mukherjee)-কে নিয়ে। নায়িকা হতে এসে উচ্চাকাঙ্খী অর্পিতা বর্তমানে রাতারাতি খলনায়িকায় পরিণত হয়েছেন।
পল্লবীর ক্ষেত্রে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের জন্য তাঁকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু পার্থর মাধ্যমে অর্পিতা নিজের জীবনযাত্রা বিলাসবহুল করে তুলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একাংশ বারবার মুখ খুলেছেন। প্রত্যেকের একটাই বক্তব্য, বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবকিছুই অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। ফলে তাঁরা খুব সহজেই মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছেন। এবার মুখ খুললেন রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra)। ইন্ডাস্ট্রির এই নামী অভিনেত্রী অত্যন্ত পোড়খাওয়া। কেরিয়ারের চড়াই-উতরাই দেখেছেন তিনি। রবিবার তাঁর ফেসবুক পোস্ট সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে।
রূপাঞ্জনা লিখেছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে ষোল থেকে কুড়ি বছর বয়সী বেশ কয়েকজন উঠতি মডেল-অভিনেত্রী রয়েছেন যাঁরা বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য ‘সুগার ড্যাডি’ ধরছেন। এই সুগার ড্যাডিরা তাঁদের বার্থডে পার্টি থ্রো করছেন। সেই পার্টিতে দেখা মিলছে ইন্ডাস্ট্রির কিছু ইনসিকিওর শিল্পী ও পরিচালকদের। এই প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসাবে অর্পিতার ঘটনা তুলে ধরে রূপাঞ্জনা লিখেছেন, এই মেয়েগুলির ভবিষ্যতও কি অর্পিতার মতো! একই সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন রূপাঞ্জনা তা হল মেয়েগুলির অভিভাবকরা এই ঘটনা কতদূর জানেন এবং জানলেও তাঁদের কি প্রশ্রয় রয়েছে! একই সাথে রূপাঞ্জনা জানতে চেয়েছেন, যেসব মেয়েরা ইন্ডাস্ট্রিতে আপোষ না করে মাথা তুলে কাজ করতে চান, তাঁদের পাশে কি আদৌ রয়েছেন নেটিজেনরা!
View this post on Instagram
রূপাঞ্জনার পোস্টে কমেন্ট করে অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য (Rupa Bhattacharya) লিখেছেন, এই ধরনের মেয়েদের মায়েরা তাঁদের প্রশ্রয় দেন। কিন্তু এই রূপার মত সর্বত্র সত্যি নয়। অর্পিতার মা মিনতি মুখোপাধ্যায় (Minati Mukherjee)-র ঘটনা তার উদাহরণ। মিনতি জানতেন না, তাঁর মেয়ে ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছেন। তবে অর্পিতার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দেখে শঙ্কা জেগেছিল তাঁর মনে। কিন্তু মেয়েকে তিনি সাবধান করলেও অর্পিতা মায়ের কথা শোনেননি। তবে শ্রুতি দাস (Shruti Das) যদি কমেন্ট বক্সে নিজেকে ‘ভুক্তভোগী’ নাও বলতেন, তাতেও সহজেই আন্দাজ করে নেওয়া যেত, তাঁকেও অপরিসীম অবহেলা দেখানো হচ্ছে। তিনিও জানতে চেয়েছেন, সত্যিই কাউকে পাশে পাবেন কিনা!
View this post on Instagram
প্রকৃত সত্য হল, নারী যখন আপোষহীন হন, তখন কাউকে পাশে পান না তিনি। ইতিহাস বারবার এই ঘটনার সাক্ষ্য বহন করেছে। নারীর জন্য অগ্নিপরীক্ষা, পোশাকের নিয়ম-কানুন, ভার্জিনিটির পাঠ। নারী অত্যাচারিত হয়ে প্রায় সাথে সাথেই মুখ খুললে তাঁকে সমাজের জেরার মুখে পড়তে হয়। অত্যাচারিত নারী যদি দেরিতে মুখ খোলেন, প্রশ্ন ওঠে এত দেরিতে কেন মুখ খুললেন! তাঁকে দাগিয়ে দেওয়া হয় ‘সতীপনা’ শব্দে। আসল কথা হল, ঘুণটা তো আগে থেকেই ধরে গিয়েছে সমাজের অন্তর্বর্তী কাঠামোয়। তার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী নারীরাই। তাঁরা কখনও মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন ভবিতব্য বলে। কখনও দিতে রাজি হয়েছেন অগ্নিপরীক্ষা। নারীকে নিজের জন্য নিজেকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পাশে কেউ না থাকুক, কি যায় আসে! মা দুর্গাও তো একাই লড়াই করেছিলেন মহিষাসুরের চতুরঙ্গ সেনার সামনে!
View this post on Instagram