অভিষেক চট্টোপাধ্যায় (Abhishek Chatterjee)-র মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে এক মাস। কিন্তু বারবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন তাঁর স্ত্রী সংযুক্তা (Sanjukta Chatterjee)। ইদানিং সর্বত্র অভিষেকের ছবি নিয়ে ঘোরার ফলে সংযুক্তাকে বিদ্রুপের শিকার হতে হচ্ছে। নেটিজেনদের একাংশের মতে, সহানুভূতি কুড়াতে চাইছেন সংযুক্তা। অনেকের কাছে, এভাবে অভিষেকের ছবি নিয়ে সংযুক্তার ঘুরে বেড়ানো হাস্যকর। সংবাদমাধ্যমের থেকে দূরে থাকতে চাইলেও বারবার ট্রোল হওয়ার ফলে আবারও মুখ খুলেছেন সংযুক্তা।
সম্প্রতি তাঁদের একমাত্র কন্যাসন্তান সাইনা (Saina Chatterjee)-কে নিয়ে পাটায়া বেড়াতে গিয়েছিলেন সংযুক্তা। কিন্তু সেখানেও তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেকের ছবি। এমনকি সংযুক্তা জানিয়েছেন, রাতে এখনও তাঁর ও সাইনার মাঝে অভিষেকের ছবি রেখে ঘুমান তাঁরা। সংযুক্তার মতে, তিনি একজন স্বাধীন ও রোজগেরে মহিলা। গত 24 শে মার্চ থেকে অভিষেকের আশীর্বাদে তিনি নিজেই সংসার চালাচ্ছেন। সংযুক্তা মনে করেন, তিনি অভিষেকের শক্তিতেই পথ চলছেন। মানুষ তাঁর প্রিয়জনকে হারানোর পর তাঁকে ফ্রেমবন্দি করলেও সংযুক্তা তা করতে পারেননি। কারণ হিসাবে সংযুক্তা জানিয়েছেন একটি অদ্ভুত কথা।
View this post on Instagram
তিনি বলেছেন, অভিষেকের মৃত্যুর পর তাঁকে ফ্রেমবন্দি করার রাতে সসংযুক্তার স্বপ্নে এসে অভিষেক নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁকে যেন ফ্রেমবন্দী না করা হয়। এমনকি সাইনার জন্মদিনে সংযুক্তা ভুল করে অভিষেকের ছবি বাড়িতে ফেলে এসেছিলেন। কিন্তু পার্টিতে পৌঁছানোর পর তাঁর মনে পড়ে, তিনি সাইনার জন্মদিনের উপহার বাড়িতে ভুলে ফেলে চলে এসেছেন। গাড়িতে করে বাড়ির দিকে এগোনোর পথে সংযুক্তা তাঁর কানের কাছে অভিষেকের গলা শুনতে পেয়েছিলেন। অভিষেক তাঁকে ফিসফিস করে অভিযোগ করেছিলেন, মেয়ের জন্মদিনে তাঁকেই বাড়িতে রেখে আসার জন্য। সংযুক্তা ট্রোলের জবাবে বলেছেন, সহানুভূতি ও প্রেমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনোদিন সহানুভূতি চাননি সংযুক্তা।
এবার আসা যাক উপরোক্ত ঘটনাগুলির বিষয়ে যা আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অতিপ্রাকৃত। প্রথমেই বলা উচিত, অভিষেকের হঠাৎই মৃত্যু তাঁর পরিবারের কাছে ছিল অনভিপ্রেত। অভিষেকের পার্থিব ভিত তাঁর পরিবার। পরিবারের প্রতি সমস্ত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি অভিষেক অন্দরমহলের কাজ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতেন। তিনি নিজে হাতে স্ত্রী ও মেয়েকে খাবার পরিবেশন করতেন। এমনকি শোনা যায়, বাড়ির প্রতিটি সিদ্ধান্ত অভিষেক নিজেই নিতেন। তাঁর অত্যন্ত প্রভাব ছিল সংযুক্তা ও সাইনার উপর। তাঁরাও এতে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু অভিষেকের হঠাৎই চলে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের মানসিক চেতনায় আঘাত দেয়। ফলে সাইনা হয়তো কিছু অনুভব না করলেও সংযুক্তার কখনও কখনও ইলিউশন হয় যা নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর অবচেতন মন। সংযুক্তার মনে হয়, অভিষেক তাঁকে অভিযোগ করছেন, তাঁর সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। এমনকি অভিষেকের স্বপ্নে নির্দেশের ঘটনাটি তাঁর অবচেতন মন দ্বারা পরিচালিত। সংযুক্তা কোনো ঘটনা কল্পনা করছেন না। তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী নারী। কিন্তু এভাবে প্রিয়জনের হঠাৎই চলে যাওয়ার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনের কোনো কক্ষ এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় ইলিউশনের। ব্যক্তি সবসময় অনুভব করেন তাঁর মৃত প্রিয়জনের অস্তিত্ব। এটি কোনো অসুখ নয়। হঠাৎই শোকপ্রাপ্তি কখনও কখনও হরমোনের কিছু পরিবর্তন ঘটায়। ফলে সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এই ধরনের ইলিউশন।
এটি কোনো গভীর অসুখ নয়। এটি মনের একটি অবস্থা মাত্র। অভিষেকের প্রতি অত্যধিক নির্ভরতা কিছুটা হলেও এর জন্য দায়ী। অভিষেকের মৃত্যুর পর সবেমাত্র একমাস হয়েছে। এখনও ধাতস্থ হননি সংযুক্তা ও সাইনা। তাঁদের অনেকটাই সময় লাগবে অভিষেককে ছাড়া সংসারে অভ্যস্ত হতে। সংযুক্তা ও সাইনার মানসিক পরিবর্তন হতে আপাতত সময় লাগার পাশাপাশি প্রয়োজন বিতর্ক থেকে দূরে থাকার। ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর পক্ষ থেকে মানবিকতার খাতিরে নেটিজেনদের প্রতি একটি ছোট্ট অনুরোধ, সংযুক্তা ও সাইনাকে যেন অভিষেকের ছবি নিয়ে অযথা ট্রোল করা না হয়। এমনকি তাঁদের ইলিউশন নিয়ে অযথা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি যেন না হয়। কারণ এই ধরনের ইলিউশনের সমস্যা প্রিয়জনকে হারানোর পর প্রায় প্রত্যেকেই অনুভব করেন। সংযুক্তা ও সাইনাকে একটু সময় দিন যাতে তাঁরা নিজেদের মতো করে জীবনটা গড়ে নিতে পারেন।
View this post on Instagram