গায়ের রং নিয়ে প্রতিনিয়ত খোটা শুনতে হয় সেদিনের ‘ত্রিনয়নী’ আজকের ‘নোয়া’কে
কাটোয়া থেকে কলকাতায় এসেছিলেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। পাশাপাশি নিজের স্নাকোত্তরের পড়াশোনা করছিলেন। আসলে ছিল নিজের মডেলিং এর স্বপ্ন। একদিন পড়াশোনার ফাঁকে টলিপাড়ায় প্রবেশ করেন। দিয়ে দিলেন জীবনের প্রথম অডিশন। আর প্রথম অডিশনেই মিলে যায় ছোট পর্দাতে অভিনয়ের সুযোগ। প্রথম ধাপে নিজের স্বপ্নের কাছাকাছি অনেকটাই চলে যান এই অভিনেত্রী। তিনি আর কেউ নন ইনি হলেন সকলের শ্রুতি দাস। এমটাই ঘটেছিল অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের সঙ্গে। একেবারে ‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান তিনি। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর দক্ষ অভিনয় জয় করে নেয় সকলের মন। এর পর স্টার জলসার ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন।
View this post on Instagram
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া কত বাঙালি পোস্ট করেছিলেন, আজকের যুগে কালো রঙ, বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে কত কথা কত বাণী। এমনকি চাপের মুখে পড়ে ফর্সা হওয়ার ক্রিমগুলো বন্ধের পথে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আজও বহু বাঙালীর মনের ময়লা দূর করা হয়নি। আজও একজন মেয়ে যতই এগিয়ে যাক নিজের জীবনে কিন্তু বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে খোঁটা কমবেশি শুনতেই হয়। সম্প্রতি এর জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন শ্রুতি দাশ।
শ্রুতি এখন নিজের কেরিয়ারে বেশ এগিয়ে আছেন। তবু কালো হওয়ার জন্য এখনো নানা গঞ্জনা শুনতে হয় শ্রুতিকে। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রুপের শিকার হলেন দেশের মাটি ধারাবাহিকে নোয়া। নোয়া গ্রামের শিক্ষিতা মেয়ে। ধারাবাহিকে যৌথ পরিবারের গল্প দেখানো হয়েছে, যার বেশিরভাগ সদস্যই আলাদা থাকেন। পুজো উপলক্ষ্যে স্বরূপনগরের পৈতৃক ভিটেতে একত্রিত হয়েছেন সকলে। তবে পুজোর আড়ালে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করছে কিয়ান ও নোয়া। নোয়া আর কিয়ানের গল্প ‘দেশের মাটি’ জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়। এই মেয়ে বহু বাঙালী দর্শকের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এই নোয়াকে গায়ের রং নিয়ে করা হল কুৎসিত মন্তব্য।
View this post on Instagram
ধারাবাহিকে দিব্যজ্যোতি দত্তর বিপরীতে নোয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রুতি। সেই সংক্রান্ত একটি পোস্ট ফেসবুকে করেছিলেন অভিনেত্রী। আর তাঁর জন্যই বর্ণবিদ্বেষের শিকার হতে হল তাঁকে। কেউ কেউ কমেন্টে লিখেছেন ‘পেত্নি’, ‘কুৎসিত’, ‘এই নায়িকাকে হটানো হোক ধারাবাহিক থেকে’, আবার কেউ লিখে বসলেন, ‘একে তো কাজের লোকের চরিত্রেই মানায়’। এইভাবে নোংরা কমেন্ট এ ভরে গেল শ্রুতির এই পোস্ট। ২০২১ এ এসে ও এখনো বহু কালো মেয়েকে এইসব শুনতে হয়।
যতই অভিনেত্রী ভালো নাচুক, গান করুক, অভিনয় করুক, সাহসিকতার সঙ্গে মডেলিং করুক তবু আজ কিছু মানুষের কাছে তিনি প্রিয় পাত্রী নন। আজ শ্রুতির কাছে কান ঘেঁষা হয়ে গিয়েছেন। শ্রুতি মুখ বন্ধ করার পাত্রী নন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “সব হিসেব তোলা থাক।” বেশি কিছু না লিখলেও এইটুকু কথায় অনেক কিছু অভিনেত্রী বলেছেন।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ কিছু না লিখলেও এক সাক্ষাৎকারে বললেন, বর্ণবিদ্বেষের শিকার তিনি আগেও হয়েছে। আবার অভিনেত্রী একসময় প্রেম করতেন সেও অভিনেত্রীকে বলেছিলেন, রোজ গায়ে কাঁচা হলুদ মাখ। ফর্সা হয়ে যাবি।’ তারপরই ব্রেক আপ হয়ে যায়। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিতে অডিশনের সময় তাঁকে নাকি শুনতে হয়েছিল, “গায়ের রং কালো, তাই হিরোইন ম্যাটেরিয়াল নয়!” কিন্তু সেই মেয়ে এখন টেলি দর্শকদের অন্দরমহলের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন নিজ অভিনয়গুণে। এমনকি কদিন পর নিজের ভালোবাসার মানুষ স্বর্ণেন্দু সম্মাদ্দারকে পেয়ে বেশ খুশি।