গত বছর প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ তাপস পাল (Tapas Pal)। 29 শে সেপ্টেম্বর তাঁর 63 তম জন্মদিনে স্মৃতিচারণ করেছেন তাঁর কন্যা সোহিনী (Shohini Pal)। তবে তাঁর ও তাঁর মা নন্দিনী (Nandini Pal)-র কাছে তাপস ‘অতীত’ নন। তিনি আজও বর্তমান। বাবাকে অতীত ভাবতে পারেন না সোহিনী। রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বাবার পছন্দের ক্রিম কেক কেটেছেন মা ও মেয়ে। সোহিনীর বন্ধু প্রীতিকা (Pritika) প্রতি বছর নিয়ম করে স্পেশ্যাল ক্রিম কেক বানিয়ে পাঠান। সেটা কাটা হবে জন্মদিনের সন্ধ্যায়।
View this post on Instagram
তাপসের জন্মদিনে তাঁকে ইন্সটাগ্রামে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ (Prasenjit Chatterjee), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) সহ তাপসের অনেক সহকর্মী ও অনুরাগীরা। এটা সোহিনীর কাছে পরম প্রাপ্তি। শৈশব থেকেই প্রসেনজিৎ-কে সোহিনী ডাকেন ‘বুম্বাকাকু’ বলে। তিনি তাপসের বাড়িতে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে সোহিনীকে বার্তা পাঠিয়েছেন ডেরেক ও’ ব্রায়ান (Derek o’ Brayan)। সোহিনী জানেন, তাঁর বাবার অস্তিত্ব কোথাও আছে। তিনি সব দেখছেন। তাপস খেতে ও খাওয়াতে খুব ভালোবাসতেন। তবে জন্মদিন বলে শুটিং বন্ধ রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না তিনি।
View this post on Instagram
কিন্তু আলাদা করে বিশাল কিছু না অ্যারেঞ্জমেন্ট হলেও নন্দিনী নিজের হাতেই সব কিছু রাঁধতেন। ডাল, ভাজা, পোস্ত, মাছের পদ খুব প্রিয় ছিল তাপসের, জানালেন সোহিনী। সেই সব রান্না করতেন নন্দিনী। গত বছর থেকে তাপসের জন্মদিনের দিন তাই দরিদ্র মানুষের জন্য সাধ্যমত খাবারের আয়োজন করেন সোহিনী ও নন্দিনী। অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া খাবারের বাক্সে থাকে খিচুড়ি, ডিমের তরকারি, মিষ্টি, কোল্ড ড্রিঙ্ক।
View this post on Instagram
জন্মদিনে বাবাকে বেশি করে মিস করেন সোহিনী। তাপসের অনুরাগীদের একাংশ যখন এদিন ‘দাদার কীর্তি’, ‘সাহেব’, ‘গুরুদক্ষিণা’ দেখবেন, সোহিনী দেখবেন না। কারণ সোহিনীর আপত্তি ছিল বাবার দুঃখী চরিত্রে অভিনয় করায়। তাই বাবার ফিল্ম মুক্তি পেলেও দেখতে যেতেন না তিনি। তবে ফিল্মের কাহিনী শুনতে কোনো বাধা ছিল না। এখন আর নতুন করে বাবার ফিল্ম দেখতে চান না মেয়ে। হয়তো মন খারাপ হয়ে যাবে। তিনি তো বাবার আদরের মেয়ে। তাই বাবার ফিল্ম দেখে তাঁকে নিজের বাবাকে খুঁজতে হবে না।
তাপস পাল সবার কাছে প্রিয় অভিনেতা হলেও তাঁর কাছে শুধুই তাঁর বাবা। স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক বৈঠকে যাওয়া একজন বাবা, মেয়েকে স্কুলে দিতে যাওয়া, ছুটি হলে নিয়ে আসা, স্পোর্টসে নিয়ে যাওয়া আর পাঁচ জন বাবার মতোই তিনিও। অন্য মানুষরা তাঁকে ফোনে না পেলেও মেয়ের ফোন কখনও মিস করতেন না তাপস। সোহিনীর কাছে তাপস পাল তারকা নন, শুধুমাত্র তাঁর বাবা।
তাপস চলে যাওয়ার পর এখন নন্দিনী ও সোহিনীর সংসার। কলকাতায় থাকেন তাঁরা। এখনও অনেকেই জানতে চান, অভিনেতা তাপস পালকে কি গ্রাস করেছিলেন বিধায়ক তাপস পালের ছায়া? নাহলে তাঁর মুখ থেকে এত রূঢ়, বিতর্কিত বক্তব্য কেন শোনা গিয়েছিল? সোহিনী বললেন, সবাই বিতর্কিত বক্তব্যগুলি শুনলেও কেউ কোনোদিন জানার চেষ্টা করেননি তার কারণ। অথবা হয়তো জানতে দেওয়া হয়নি। তবে তাপস পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সোহিনী ও নন্দিনী তো কোনোভাবেই সমর্থন করেননি তাপসের বিতর্কিত মন্তব্য। এতদিন পরে বাবার হয়ে সাফাই গাইতে না চাইলেও সোহিনী জানিয়েছেন, একসময় বাবাকে প্রচুর খারাপ কথা শুনতে হয়েছিল। নোংরা কথা শুনতে হয়েছিল তাঁকে ও তাঁর মাকেও। এইসব শুনতে শুনতে রক্ত-মাংসের মানুষ তাপসের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফল ছিল এই বিতর্কিত মন্তব্য। সেটা বুঝেছিলেন সোহিনী ও নন্দিনী। তাই শেষ দিন অবধি ছিলেন তাপসের পাশে।
View this post on Instagram