সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen), অন্তরালে থেকেও তিনিই মহানায়িকা। আজও তাঁর সিংহাসন শুধু তাঁরই। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুচিত্রাই প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী যিনি করেছিলেন পাবলিসিটি স্টান্ট।
View this post on Instagram
সময়টা 1963 সাল। সেই সময় অভিনেত্রীরা নিজেদের মুড়ে রাখতেন এক অভিনব মোড়কে। অধিকাংশ অভিনেত্রী ছিলেন ঘরোয়া। প্রকৃতপক্ষে, সেই সময় অধিকাংশ মেয়েরা কেরিয়ার গড়তে নয়, পেটের দায়ে আসতেন অভিনয় জগতে। এই কারণেই একটা সময়ের পর স্টার হলেও বিয়ে করে আর পাঁচ জন সাধারণ মেয়ের মতোই সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সুচিত্রা কিন্তু পেটের দায়ে অভিনয় জগতে না এলেও অভিনেত্রী হতে চাননি, গৃহিণী হতে চেয়েছিলেন, সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধিলিপি তাঁকে তকমা দিল মহানায়িকার। তৎকালীন সময় সুচিত্রার স্টাইল, তাঁর পোশাক সবকিছুই ছিল মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্ব তাঁকে সবার থেকে উচ্চতায় রেখেছিল। সেই সময় সমগ্র ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি মানুষও জানতেন না ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’ কাকে বলে! কিন্তু তা করে দেখিয়েছিলেন সুচিত্রা।
View this post on Instagram
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)-র সঙ্গে জুটি বেঁধে সুচিত্রা অভিনয় করেছিলেন ‘সাত পাকে বাঁধা’ বাংলা ফিল্মে। সেকালে উত্তম কুমার (Uttam Kumar) ও সুচিত্রা সেনের জুটি ছিল সুপারহিট। তাই প্রথম থেকেই সৌমিত্র-সুচিত্রার জুটি নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত ছিলেন প্রযোজক ও পরিচালকরা। কিন্তু তাঁদের চমকে দিয়ে দুই কিংবদন্তীর অভিনয় সকলের নজর কেড়েছিল। দর্শকদের অত্যন্ত পছন্দ হয়েছিল সৌমিত্র ও সুচিত্রার জুটি। 1963 সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সাত পাকে বাঁধা’-য় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। তবে তিনি প্রথম বাঙালি নায়িকা নন যিনি শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রকৃত সত্য হল, প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় নায়িকা ছিলেন চুনীবালা দেবী (Chunibala Devi) যিনি সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) পরিচালিত ফিল্ম ‘পথের পাঁচালী’-তে ইন্দির ঠাকরুনের চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে তা ছিল মরণোত্তর। ফিরে আসা যাক সুচিত্রার কথায়।
View this post on Instagram
1963 সালে সুচিত্রা ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার পর হয়েছিল ‘সাত পাকে বাঁধা’-র আফটার সাকসেস পার্টি। সেই পার্টিতে সৌমিত্র পরে এসেছিলেন তাঁর প্রিয় একটি পাঞ্জাবি। হঠাৎই সুচিত্রা ঘটিয়ে বসলেন একটি ঘটনা। তিনি হাসতে হাসতে এগিয়ে এলেন সৌমিত্রর দিকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুচিত্রা এক টানে ছিঁড়ে দিলেন সৌমিত্রর পরনের পাঞ্জাবি। সৌমিত্রও হাসছেন কিন্তু অপ্রস্তুত। প্রকৃতপক্ষে, ‘সাত পাকে বাঁধা’-য় এই রকম একটি দৃশ্য ছিল। সেখানেও দেখা গিয়েছিল, সুচিত্রা ছিঁড়ে দিচ্ছেন সৌমিত্রর পাঞ্জাবি। সেই দৃশ্যকেই নতুন করে পার্টিতে তুলে ধরেছিলেন সুচিত্রা। এটাই ছিল ‘সাত পাকে বাঁধা’-কে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর পাবলিসিটি স্টান্ট।
View this post on Instagram
সুচিত্রা নেই, কিন্তু থেকে গেছে তাঁকে ঘিরে বহু মুহূর্ত। 1931 সালের 6 ই এপ্রিল তাঁর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের বুকে। রমা থেকে হয়েছিলেন সুচিত্রা। জিতে নিয়েছিলেন আপামর বাঙালির হৃদয়। মহানায়িকার জন্মবার্ষিকীতে ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।
View this post on Instagram