‘সৌমিত্র’ এই নামটা শুনলেই আপামর বাঙালী হৃদয় উদ্বেলিত হয়…শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়। ১৫ ই নভেম্বর সেই বিষাদময় দিন, যেদিন বাংলার কিংবদন্তী অভিনেতা নক্ষত্রলোকে চলে যান। শত শত ভক্তরা ভিড় করে নিথর সৌমিত্রকে ঘিরে। মেয়ে পৌলমী ভালবাসার শেষ চুম্বন এঁকে দেন বাবার কপালে। সশরীরে তিনি আর না থাকলেও অমরত্বের ছোঁয়া পেয়েছেন তিনি। এই ব্যপারে কবি শ্রীজাত-র দুই লাইন উল্লেখ করবো – ” সাড়া জীবনের মতো একবারই এই মৃত্যুসাজ….এতদিন প্রাণ ছিল। অমরত্ব শুরু হলো আজ।” সত্যি আজ অপু, ফেলুদা সকলেই অমর হয়ে থেকে গেলেন সকলের মনে। সৌমিত্র’র কাজ নিয়ে আমরা সকলেই কম বেশি কিছু না কিছু জানি, কিন্তু তাঁর পরিবারের কথা ক’জন জানেন? তাঁর পরিবারও তারই মতন শ্রদ্ধাশীল, প্রতিভাবান।
১৯৫৯ এ ‘অপুর সংসার’-এর হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ঠিক এর পরের বছরেই ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন দীপা চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে হয় পরবর্তীতে।
উত্তম কুমারের পর সেই সময় বাঙালী হৃদয়ে যেই দীর্ঘাকৃতি, সুদর্শন পুরুষ হিল্লোল তুলেছিল তিনি হলেন এই সৌমিত্র। মহিলা মহলে তুমুল হিল্লোল তোলা এই মানুষটির প্রেমে বলীয়ান ছিলেন তাঁর স্ত্রী দীপাও।
১৯৭০ এ ‘বিলম্বিত লয়’ বাংলা মুভিতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্রর স্ত্রী দীপা, তাও আবার উত্তম কুমারের সঙ্গে। ১৯৯৮ এ ‘দ্য ট্রি’ ‘গাছ’ ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছিলেন দীপা ও সৌমিত্র একসঙ্গে। হাতে গোনা দুই তিনটে সিনেমায় অভিনয় করেছেন দীপা। এরপরেই সংসারে মন দেন তিনি। মেয়ে পৌলমীকে থিয়েটার মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য প্রেরণাও দিয়েছেন।
মায়ের ও বাবার মতন তাঁদের মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ও বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার আরও অনেক কিছু। বাবার থেকে যেই প্রেরণা যেই শক্তি পেয়েছেন পৌলমী তাই তাঁর কাছে অনন্য সম্পদ।
সৌমিত্র তাঁর পরিবারকে নিয়ে খুব বেশি ক্যামেরার সামনে আসেননি। ক্যামেরাপ্রেমী এই মানুষ শুধু মাত্র অভিনয়ের জন্য মৃত্যুর আগের সময় পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। এক ইন্টার্ভিউতে সৌমিত্রকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে তিনি এত এনার্জি কী করে পান? হেসে বলেছিলেন, “এনার্জি-টেনার্জি নয়, এটিই তো আমার কাজ। এটি না করলে আর কী করব আমি।”