GossipHoop Plus

রাজেশের জীবনে একাধিক নারী থেকেও অপবাদের ভাগী হয়েছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়া!

রাজেশ খান্না (Rajesh khanna) মানেই রঙিন মেজাজ। কিন্তু রাজেশ কোনোদিন চকোলেট বয় ছিলেন না। কেন ছিলেন না, সেই প্রসঙ্গে আসার আগে জানতে হবে ভারতের প্রথম সুপারস্টারের উত্থানের কাহিনী যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল তাঁর ভবিষ্যতের জীবনগাথা।

1965 সালে ফিল্মফেয়ার আয়োজিত অল ইন্ডিয়া ট‍্যালেন্ট কনটেস্ট-এ প্রথম হয়েছিলেন রাজেশ। সেই একই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন ফরিদা জালাল (farida zalal), অমিতাভ বচ্চন (Amitabh bachchan)-রাও। কিন্তু সবাইকে হারিয়ে প্রথম হয়ে রাজেশ ‘আখরি খত’ ফিল্মের মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ করেন। 1966 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ফিল্ম পরিচালনা করেছিলেন চেতন আনন্দ (Chetan anand)। 1967 সালে ‘আখরি খত’ অস্কারের নমিনেশন পায়। শুরু হয় রাজেশ খান্নার তারকাখচিত জীবন। সেই সময় রাজেশ খান্না নিউকামার হলেও তাঁর নিজস্ব একটি এমজি স্পোর্টস কার ছিল। এই ঘটনা থেকেই রাজেশের শৌখিনতার পরিচয় পাওয়া যায়।

একটার পর একটা সুপারহিট ফিল্ম রাজেশকে একদিকে যেমন ভারতের প্রথম সুপারস্টারের তকমা দিয়েছিল, অপরদিকে তাঁর নারী ও সুরায় আসক্তি শুরু হয়েছিল। এইসময় রাজেশের জীবনে আসেন অঞ্জু মহেন্দ্রু (Anju mahendru)। রাজেশ তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই রাজেশের সঙ্গে টিনা মুনিম (Tina muneem)-এর সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। তখন টিনা বলিউডে নিউকামার। টিনা ও রাজেশের সম্পর্কের জের পোয়াতে হয়েছিল এক নামী মহিলা সাংবাদিককে। তিন মাস ধরে তাঁকে ঘোরানোর পর রাজেশ ইন্টারভিউয়ের ডেট দিয়েছিলেন। সেই মহিলা সাংবাদিক নির্দিষ্ট দিনে রাজেশের বাংলোয় পৌঁছে প্রায় চার ঘন্টা অপেক্ষার পর রাজেশের ভৃত‍্য এসে জানান, রাজেশ আজ ইন্টারভিউ দেবেন না। অথচ সেই সময় রাজেশ ও টিনা বাংলোর অন্য একটি ঘরে ব্যস্ত ছিলেন। সেই মহিলা সাংবাদিক রীতিমত কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, রাজেশের ইন্টারভিউ না নিলে তাঁর চাকরি থাকবে না। তাঁর কান্না শুনে রাজেশ ও টিনা সেখানে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা তাঁকে অপমান করেন। তবে পরবর্তীকালে অঞ্জু মহেন্দ্রুর হস্তক্ষেপে টিনার সঙ্গে রাজেশের সম্পর্ক ভেঙে যায়।

কিন্তু অঞ্জু জানতেন না, রাজেশের একাধিক যৌন সম্পর্কের কথা। একসময় তৎকালীন এক অভিনেত্রী অভিযোগ করেন রাজেশ তাঁকে হোটেলের রুমে ডেকে ‘ব্লো জব’ করতে বাধ্য করেছিলেন। এই সময় থেকেই রাজেশ ও অঞ্জুর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। এই সম্পর্কের মাঝে চলে আসেন ডিম্পল কাপাডিয়া (Dimple kapadia)। ডিম্পল তখন সবেমাত্র ‘ববি’ ফিল্মে অভিনয় করেছেন। ‘ববি’ রিলিজ হওয়ার আগেই মাত্র পনেরো বছর বয়সী ডিম্পলের বিয়ে হয়ে যায় তিরিশ বছর বয়সী রাজেশের সঙ্গে। বিয়ের পর রাজেশের নিষেধ মেনে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন ডিম্পল। রাজেশ খান্নাকে বিয়ে করার পর ডিম্পলের দুই মেয়ে টুইঙ্কল (Twinkle khanna) ও রিঙ্কি খান্না (Rinki khanna)-র জন্ম হয়। কিন্তু দিনের পর দিন ডিম্পলের উপর রাজেশের অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। একসময় এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই মেয়ে টুইঙ্কল ও রিঙ্কিকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন ডিম্পল।

কিন্তু সেপারেশনে থাকলেও রাজেশকে ডিভোর্স দেননি ডিম্পল। রাজেশের সঙ্গে সেপারেশনের দুই বছর পরে আবারও অভিনয় শুরু করেন ডিম্পল। সেই সময় তাঁর অত্যন্ত ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন সানি দেওল (sunny deol)। কিন্তু কবেই বা সমাজ নারী-পুরুষের বন্ধুত্বকে নির্মল বলে মেনে নিয়েছে! ফলে সানি ও ডিম্পলের সম্পর্ক নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। অনেকে বলতে শুরু করেন, সানি ও ডিম্পল লুকিয়ে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তা ছিল সর্বৈব মিথ্যা। ডিম্পল সানির সঙ্গে বিভিন্ন কথা শেয়ার করতেন বন্ধু হিসাবে। কিন্তু এই ঘটনার আঁচ গিয়ে পৌঁছায় সানির পরিবারেও। সানির স্ত্রী তাঁকে আত্মহত্যার হুমকি দেন। ডিম্পলও নিজের জীবনে এই ‘পার্সোনাল ডিজাস্টার’ সহ্য করতে পারছিলেন না। ফলে বন্ধুত্ব অটুট রাখার খাতিরে সানি ও ডিম্পল দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন।

অপরদিকে রাজেশের অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি বেড়েই চলেছিল। একসময় তিনি অ্যালকোহল পান করে সেটে আসতে শুরু করেন। এমনকি রাজেশের মধ্যে পাংচুয়ালিটি ছিল না। শর্মিলা ঠাকুর (sharmila tagore) জানিয়েছেন, সকাল দশটায় কল টাইম থাকলে রাজেশ পৌঁছাতেন দুপুর তিনটে নাগাদ। কখনও কখনও মাত্র একটা শট দিয়ে বেরিয়ে চলে যেতেন রাজেশ। ক্রমশ অহঙ্কারী হয়ে ওঠা রাজেশের ফিল্ম ফ্লপ করতে শুরু করেছিল। অপরদিকে বাড়ছিল ডিম্পলের স্টারডম। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘জঞ্জির’ রাজেশের কেরিয়ারের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছিল। ‘জঞ্জির’-এর মাধ্যমে বলিউডে শুরু হয়েছিল অমিতাভ-যুগ। তাঁর নম্রতা, নিয়মানুবর্তিতায় মুগ্ধ প্রযোজক ও পরিচালকরা রাজেশের অহঙ্কারের ঝামেলা পোহাতে চাননি। তাছাড়া রাজেশের জন্য তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। অমিতাভ ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন সেরা বাজি।

ওদিকে ডিম্পল অভিনীত ‘রুদালী’ তখন বিগেস্ট হিট। একসময় হালে পানি না পেয়ে রাজেশ কংগ্রেস পার্টি জয়েন করলেন। 1991 থেকে 1996 পর্যন্ত সাংসদ থাকলেও তাঁর স্বভাবের কারণে রাজনীতিতেও টিকতে পারলেন না রাজেশ। আবারও ফিরে এলেন অভিনয়ে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে তখন অভিনয়জগতে নতুন মুখের সারি যাঁদের সঙ্গে রাজেশ বা তাঁর অভিনয়শৈলী মানানসই ছিল না। ধীরে ধীরে অসফলতার অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকেন রাজেশ। শেষ জীবনেও তাঁর জীবনে ছিলেন এক নারী। তাঁর নাম ছিল অনিতা আডবাণী (Anita advani)। অনিতা রাজেশের লিভ-ইন পার্টনার ছিলেন। পরে রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এ এসে তিনি নিজেই সেই কথা জানিয়েছিলেন।

অপরদিকে ডিম্পল একাই দুই মেয়েকে বড় করে তুলেছেন। টুইঙ্কল আজ একজন সফল অভিনেত্রী ও লেখিকা। তাঁর সঙ্গে অক্ষয়কুমার (Akshay kumar)-এর বিয়ে হয়েছে। অক্ষয় যখন জানতে পেরেছিলেন, রাজেশ ক্যান্সার আক্রান্ত, তখন অনেক অনুরোধ করে ডিম্পলকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজেশের কাছে। শেষবারের মতো ডিম্পল ও রাজেশের দেখা হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই রাজেশ মারা যান। ডিম্পল কিন্তু কোনোদিন টুইঙ্কল ও রিঙ্কিকে রাজেশের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেননি। কয়েক বছর আগে ইউকে-এর একটি স্টেশনে সানি ও ডিম্পলকে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ডিম্পলকে তুমুল ট্রোল করা শুরু হয়। কিন্তু ডিম্পল কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। বরং তিনি মেতে থেকেছেন তাঁর সৃষ্টিশীলতায়। অভিনয়ের পাশাপাশি ডিম্পল-এর একটি মোমবাতি তৈরীর কারখানা রয়েছে যেখানে তৈরী হয় রঙবেরঙের শৌখিন মোমবাতি। এছাড়াও তাঁর মোমবাতি বিভিন্ন আর্ট এক্সিবিশনেও ঠাঁই পায়।

ডিম্পল কাপাডিয়ার অসফল বিয়ে, সানির সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি সব মিলিয়ে ডিম্পলকে এক ভয়াবহ মানসিক লড়াই লড়তে হয়েছে। এই বয়সেও কোনো পুরুষের সঙ্গে তাঁকে দেখা গেলেই তাঁর সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কেন একজন নারী স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারেন না? কেন তিনি তাঁর ইচ্ছেমত চলাফেরা করতে পারেন না? অত্যাচারিত স্বামীর হাত থেকে মুক্তি পেলেও ডিম্পল মুক্তি পাননি সমাজের অভিশাপ থেকে, চরিত্রহনন থেকে। তাই তিনি মোমবাতির মৃদু আলোতেই খুঁজে নিয়েছেন নিজের শান্তি।

Related Articles