শক্তিমান, নব্বই দশকের ছেলেমেয়েদের নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য এই একটা নামই যথেষ্ট। আমাদের রবিবারের অলস দুপুর গুলোর অনেকটা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শক্তিমানের সাথে। যে শক্তিমান এখনও সমানভাবে আমাদেরকে স্মৃতিমেদুর করে তোলে সেই শক্তিমানকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে হয়। কিন্তু ঠিক কি কারণে শক্তিমান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা অধরাই থেকে গেছিল দর্শকদের কাছে। শক্তিমানের প্রযোজক-অভিনেতা মুকেশ খান্না এতদিন পর নিজেই সত্যিটা দর্শকদের সামনে আনলেন।
একটি সাক্ষাৎকারে শক্তিমানের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “রামায়ণ-মহাভারতের পর সবথেকে জনপ্রিয় সিরিয়াল ছিল শক্তিমান। বিজ্ঞাপন, টিআরপি এসব নিয়ে আমার কোনো অসুবিধাই ছিল না। শক্তিমানের দৌলতেই আমি আমার প্রযোজনা সংস্থা ভীষ্ম ইন্টারন্যাশনালের যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলাম। হয়েছিল কি, আমি শক্তিমানের প্রস্তাব নিয়ে দূরদর্শনের অফিসে যাই, ওখানকার ডিজি কে আমি ভারতের প্রথম সুপারহিরোর কনসেপ্ট শোনাই। উনি বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে আমায় একদিন শনিবার দেখে আসতে বললেন। উনি সোজাসুজি আমাকে ১০৪ টি এপিসোডের কথা বলেন। ওই সময় ছাব্বিশটা এপিসোড পাওয়া যেত। ৫২ এপিসোড অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পেতে হত। শনিবার সকালে বাচ্চাদের স্কুল থাকত তাই আমি ডিজি কে বলি রাতের দিকে যদি কোন স্লট ফাঁকা থাকে তাহলে দিতে। উনি রাজি হয়ে যান। শনিবার সাড়ে এগারোটা এবং মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারোটার স্লট নিতে বলেন। দুটোই নন প্রাইম স্লট। আমি মেনে নিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে দুটোর নন প্রাইম স্লটই হঠাৎ করে প্রাইম স্লটে পরিণত হয়ে গেল। সেই সময় ছেলেমেয়েরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে পর্যন্ত শক্তিমান দেখত!”
নিজের পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”সেই সময় দুটো প্যাকেজে আমার পারিশ্রমিক ছিল তিন লাখ। ১০০,১৫০ এরকমভাবে ২০০ এপিসোড যখন শক্তিমান পার করে ফেলল ওনারা নিজেরাই আমাকে রবিবারে আসার প্রস্তাব দিলেন। আমার পারিশ্রমিক গিয়ে দাঁড়ালো সাত লাখ আশি হাজারে। পরের বছর আরও ১০৪ টি এপিসোড বেশি হতেই আমার পারিশ্রমিক বরাদ্দ হল দশ লাখ আশি হাজারে। আমি বললাম আপনারা সাফল্যকে এভাবে পেনালাইজ করতে পারেন না। ওনারা বলেন শক্তিমান স্যাটেলাইটের একশোটি সিরিয়ালের মধ্যে একমাত্র জনপ্রিয় সিরিয়াল। যখন আমি জানলাম আমার পারিশ্রমিক ষোলো লাখ তখন আমি প্রতিবাদ করি। তখন ডিজিও পরিবর্তন হয়েছিল, চ্যানেলের প্যাটার্নেও বদল এসেছিল।রবিবার সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটায় আমি আর্য্যমানও চালাতাম। বারোটা থেকে একটায় চলত শক্তিমান। কিন্তু চ্যানেলের এতে লোকসান বাড়ছিল। অনিচ্ছাসত্ত্বেও শক্তিমানকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয় কাহিনী অসমাপ্ত রেখে। মানুষের ক্ষোভও ছিল এই নিয়ে। কিন্তু এখনও অনেকেই জানতে পারেনি শক্তিমানের বন্ধ হবার আসল কারণ। এটাই আসল কারণ।”
শোনা যায় অনেক শিশুরা শক্তিমানকে নকল করতে গিয়ে আঘাত পেত,প্রাণ হারাত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”কেউ কেউ এটা লেখালেখি করে শক্তিমান কে নকল করতে গিয়ে বাচ্চারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত। এটা একদম ভ্রান্ত ধারণা।”
শক্তিমান কি আবার ফিরবে ছোটপর্দায়? এই প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়েছেন মুকেশ খান্না,”সবাই জানতে চায় শক্তিমানের দ্বিতীয় সিজন কবে আসবে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাদের মত আমিও একইভাবে অপেক্ষারত। হয়ত খুব শীঘ্রই দেখা করব আমরা।”
ইতিমধ্যেই সোনি পিকচার্স শক্তিমানকে বড় পর্দায় আনবে বলে ঘোষণা করেছে। এখন দেখার বিষয় ভারতের প্রথম সুপারহিরো যার সাথে অসংখ্য ছোটবেলার আবেগ জড়িয়ে রয়েছে, বড় পর্দায় এলে তা কিরকম ভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।