Mamata Banerjee: আমার বায়োপিক বানাতে হবেনা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আশির দশক থেকে কালীঘাট অঞ্চলের অত্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের লড়াই ছিল পরিবর্তনের জন্য। সমাজের তথাকথিত নিয়ম মানতে পারেনি সে। সেদিন তার পরনে সাদা শাড়ি থাকত কখনও, কখনও বা সালোয়ার-কামিজ। আসলে কালীঘাট অঞ্চলের মন্দির চত্বরে বরাবর পাঁচ টাকার বিনিময়ে একজোড়া সাদা শাড়ি মিলত। প্রাইমারী স্কুলের টিচারের মাইনে বিলাসিতার ছিল না। ফলে ওই দুটি শাড়ি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকত মেয়েটি। বাড়িতেও অত বড় সংসার চালাতে হিমশিম। অর্ধেক দিন রাতে এক গ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়ত মেয়েটি। তার ভাগের রুটিটা যে ছোট ভাইকে খেতে দিয়েছে। হয়ে গিয়েছিল মুড়ি খাওয়ার অভ্যাস। চোখে অনেক বড় স্বপ্ন যা ঘুমাতে দিত না। এই কথাগুলি পড়ার পর মনে হতেই পারে, এ আর এমন কি! যত আজগুবি গল্পকথা! কিন্তু আজও, একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও বহু মেয়ে এভাবেই পরিবারের জন্য আত্মত্যাগ করেন। নারী যে মাতৃজাতি। তাই কষ্ট পেতে নেই। মেয়েটির কষ্ট হত না। হয়তো বা হত। মুখে বলতেন না। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করেছিল মেয়েটি। পরবর্তীকালে শঙ্খ বাজিয়ে বাংলা বরণ করে নিয়েছিল তার মেয়েকে, বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পদে। তিনি, বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), যাঁকে বিদ্রুপ করতে গেলেও মাথা নেড়ে বলতেই হয়, সত্যিই একসময় লড়াই করেছেন তিনি।
View this post on Instagram
বহুদিন আগে মমতার জীবন অবলম্বনে একটি ফিল্ম তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শতাব্দী রায় (Shatabdi Roy)। কিন্তু ছুঁতে পারেননি মমতাকে। বরাবর নিজের বায়োপিক বানানোর ঘোরতর বিরোধী মমতা। এদিনও তাঁর গলায় ছিল একই সুর। বরাবর বাংলার ভালো কাজের প্রচার চেয়েছেন মমতা। তাঁর মতে, ফিল্ম এই প্রচারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশনাল বোর্ডের বৈঠকে শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন ফিল্ম পরিচালক গৌতম ঘোষ (Gautam Ghosh)। তাঁকে এদিন মমতা অনুরোধ করেন, বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভালো ফিল্ম বানাতে অথবা তিন মাস বা ছয় মাসের স্লটে টিভি অনুষ্ঠান করতে যার মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কথা সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। মমতা বলেন, ‘বাংলাকে জানুন’ বা এই ধরনের কিছু নাম দিয়ে কাজ শুরু করতে।
কিন্তু মমতা যখন এই পরামর্শ দিচ্ছেন তখন তাঁর পাশ থেকে বোর্ডের এক সদস্য মমতাকে তাঁর বায়োপিকের কথা বললে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর বায়োপিক চাই না। বাংলার ভালোর জন্য কোনো অনুষ্ঠান চাই। মমতার মতে, চারিদিকে অনেক নেতিবাচক কথা ছড়াচ্ছে। ফলে বাংলার পক্ষে তা ঠিক নয়। এই কারণে বাংলার ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুরোধ করেছেন। বৈঠকে ফিল্ম জগতের প্রতিনিধিরা বাংলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথাশতুলে ধরতে 30-40 সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনী ফিল্ম তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রচার করার কথাও বলেন। মমতা তাতে সায় দিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ফিল্ম তৈরির মূল দায়িত্ব মমতা অর্পণ করেছেন গৌতমের হাতেই।
এদিন বৈঠকে গৌতম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), দেব (Dev), প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prasenjit Chatterjee), সায়ন্তিকা (Sayantika) সহ ফিল্ম জগতের বহু ব্যক্তিত্ব। মমতা সকলকে অনুরোধ করেছেন, এই বিষয়ে কোটেশন তৈরি করতে। এমনকি কত টাকা লাগবে, তাও জানাতে বলেছেন। ওই ফিল্ম তৈরি হওয়ার পর বৈঠক করে ফিল্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত।
পাশাপাশি, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফিল্মমেকারদের বাংলায় শুটিং করতে আসার জন্য উৎসাহ দেওয়ার কথাও বলেন মমতা। তবে তিনি বলেছেন, কেউ যেন বাংলায় শুটিং করতে এসে বাংলার নামে অপপ্রচার না করে।