বাতাসে পুজোর গন্ধ। নীল আকাশ, কাশফুলের বন জানান দিচ্ছে, মা আসছেন উমা রূপে। সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর পুজোর চারটে দিন সেলিব্রিটিরা কাটিয়ে দিতে চান নিজের মতো করে। তবে এমনও একটা সময় ছিল যখন তাঁরা সেলেব হননি। সেই সময় ও এই সময়ের ফারাক বোঝা গেল সপ্তর্ষি মৌলিক (Saptarshi Moulik)-এর কথায়।
উত্তরপাড়ায় শৈশব কেটেছে সপ্তর্ষির। নব্বইয়ের দশক যথেষ্ট কঠিন ছিল ছোটদের পক্ষে। ঠাকুর দেখার অনুমতি পেতে হয়রান হয়ে যেত তারা। ব্যতিক্রম নন সপ্তর্ষিও। একটু বড় হতে পুজোর সময় ঠাকুর দেখতে কলকাতায় যাওয়ার অনুমতি পেতেন সপ্তর্ষি। এখনও জানেন না, পুজোর সময় কেন ধর্মতলায় গিয়েছিলেন! তবে ম্যাডক্স স্কোয়্যারে সুন্দরী মেয়েদের দেখার কথা এখনও মনে আছে সপ্তর্ষির। উত্তরপাড়া থেকে প্রথমে শ্যামবাজার ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য প্রথমবার অনুমতি পেয়েছিলেন সপ্তর্ষি। সেই সময় গিয়েছিলেন গোলবাড়িতে।
পরবর্তীকালে দক্ষিণ কলকাতা যাওয়ার জন্য ছাড় পেয়েছিলেন সপ্তর্ষি ও তাঁর বন্ধুরা। তবে ‘নান্দীকার’-এ যোগ দেওয়ার পর থেকে পুজোর বাকি দিনগুলি বেরোতে না চাইলেও নবমীর জন্য অপেক্ষা করতেন সপ্তর্ষি। তাঁর একটি বিশেষ কুসংস্কার রয়েছে। সপ্তর্ষির মতে, শোয়ের আগে মজা করলে ভালো করে শো হবে না। ‘নান্দীকার’-এ যোগ দেওয়ার পর সোহিনী (Sohini Sengupta)-র কাছ থেকে শুনেছিলেন সপ্তর্ষি, ভালো অভিনেতা হওয়ার জন্য আগে ভালো মানুষ হতে হয়। নবমীর দিনের শোয়ের জন্য মনোযোগ দিলে তাঁর মনে হত, তিনি ভালো মানুষ হয়ে গিয়েছেন। অভিনয় করতে ভালোবাসেন সপ্তর্ষি। তাঁর কাছে এটি মহৎ কাজ।
View this post on Instagram
কোনোদিনই রোম্যান্টিক নন সপ্তর্ষি। তা নিয়ে প্রায়ই সোহিনীর সাথে তাঁর ঝগড়া হয়। তবে কাউকে নিয়ে কবিতা লিখতে খুব ভালো লাগে সপ্তর্ষির। বিয়ের পর অবশ্য সোহিনী সবকটি কবিতাই শুনেছেন। সপ্তর্ষি কোনোদিন তাঁর অনুভূতি ভাষায় বলার পক্ষপাতী নন। কিন্তু সারা বছর দেখা স্কুলের ইউনিফর্ম পরা বান্ধবীরা হঠাৎই পুজোর দিনগুলোয় শাড়ি পরে সুন্দর হয়ে যেত। চলতি বছরের পুজোয় স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta)-র লেখা চিত্রনাট্য অনুযায়ী তৈরি নাটক ‘এক থেকে বারো’ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন সপ্তর্ষি। ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’-এর অনুবাদ এটি।
স্বাতীলেখার মৃত্যুর পর তাঁর ঘর গোছাতে গিয়ে এই চিত্রনাট্য পেয়েছিলেন সপ্তর্ষি ও সোহিনী। সিদ্ধান্ত হয় মঞ্চস্থ করার। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে নবমীর দিন মঞ্চস্থ হবে ‘এক থেকে বারো’। বাকি দিনগুলি পরিবারের সাথে কাটাতে চান সপ্তর্ষি। ইচ্ছা আছে, নবমীর দিন নাটক শেষ হওয়ার পর উত্তরপাড়ায় নিজের বাড়িতে সোহিনীকে নিয়ে যাওয়ার। দশমীর দিন ওখানেই কাটাবেন তাঁরা। বাকি দিনগুলি কলকাতার বুকে, পাড়ার মাইকে ঢাকের শব্দ শুনে দিব্যি কেটে যাবে।
View this post on Instagram