“কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ–” যিনি ছোটবেলা থেকে নাচ প্র্যাকটিস করেন তিনি কেবল বলতে পারেন যে নাচ শুধু শরীরচর্চার বিষয় নয়, এই নাচের মধ্যে দিয়ে ভেতরের আনন্দ, দুঃখ, রাগের বহিঃপ্রকাশ সম্ভব হয়। সঙ্গীত যেমন অন্তরাত্মা কাদিয়ে দিতে পারে, তেমনই নাচ শিল্প সত্তাকে উদ্ভাসিত করতে পারে।
প্রসঙ্গত, একটা সময় বলিউডে বেশ কয়েক জন অভিনেত্রী ছিলেন যারা অভিনয়ের পাশাপাশি নাচেও সাবলীল। বিশেষ করে সত্তর ও আশির দশকের অভিনেত্রীরা যেমন ওয়াহিদা, হেলেন, মধুবালা, এবং হেমা এরা প্রত্যেকেই অভিনয়ের পাশাপাশি নাচে দক্ষ ছিলেন। আমাদের আজকের প্রসঙ্গ হেমা মালিনী। তিনি যেমন রূপবতী তেমনই ছিলেন গুনবতী। তার রূপের আগুনে সেই সময়কার প্রভাবশালী অভিনেতারা হাবুডুবু খেতেন, যদিও সকলের মুখের খাওয়ার একা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। এই দুই জুটি অর্থাৎ হেমা ও ধর্মেন্দ্রর প্রেমের ও বিয়ের কাহিনী আরো চটকদার।
১৯৬৮ সালে স্বপ্ন কা সওদাগর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষিক্ত হন।সর্বমোট ১১ বার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। ২০০০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মাননা লাভ করেন। একাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন হেমা অভিনয় জগতে আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি তার কর্মজীবন তামিল ভাষার চলচ্চিত্র দ্বারা শুরু করেছিলেন, তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো ইদু সাথিয়া যেটি ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়েছিলো, যদিও তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় এবং ওটির নাম ছিলো পাণ্ডব বনবাস। ১৯৬৮ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের মহানায়ক রাজ কাপুর এর সঙ্গে হেমা অভিনীত চলচ্চিত্র স্বপ্ন কা সৌদাগর মুক্তি পায়। তিনি হলেন বলিউডের ড্রিম গার্ল। আজকের দিনে দাড়িয়েও তিনি চুটিয়ে রাজনীতি, সংসার ও নাচের অনুশীলন করে যাচ্ছেন।
অভিনয়ে সফল হলেও নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র। নাচই তাঁর প্রথম ভালোবাসা। তিনি ভারতীয় সব ধরনের নাচে দক্ষ। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও জানা আছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল নাগাদ হেমা মালিনী বিশ্ব দরবারে ভারতীয় সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তার সংস্থা ‘সিনার্জি’র উদ্যোগে জর্জিয়ার শিল্পীদের সঙ্গে একটি ডান্স শো-এর আয়োজন করেন। ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের সঙ্গে জর্জিয়ার ব্যালের মিশেলে নতুন ‘ডান্স ফর্ম’ মানুষকে আনন্দ দেবে বলে মনে করেছিলেন তিনি। ভারতনাট্যম, কত্থক, ওডিশি-র ফর্মের সঙ্গে ব্যালের যুগলবন্দি তৈরি করেছিলেন তিনি। সত্যি, যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে নাচের শিক্ষা রয়েছে তার কাছে বয়স শুধু মাত্র সংখ্যা। শিল্প তো জন্ম নেয় শুধু এর মৃত্যু নেই।